পিসিপি’র চট্টগ্রাম পলিটেকনিক শাখা’র কাউন্সিল সম্পন্ন, ১৫ সদস্যের কমিটি গঠিত
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ১০ নভেম্বর ২০২৩

“সুবিধাবাদের খোলস ছেড়ে দিয়ে সংগ্রামে একাত্ম হও”, ”এসো দুঃসাহসী তরুণ দল, পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতি ও জনমুক্তির আন্দোলনে ভীরু কাপুরুষের মত বসে না থেকে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর চট্টগ্রাম পলিটেকনিক শাখার ১ম কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে।
অদ্য ১০ নভেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সংলগ্ন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল অফিসের সভাকক্ষে এই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।
অধিবেশনের শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী পার্থ খীসা। শোক প্রস্তাব পাঠ শেষে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আপোষহীন লড়াই-সংগ্রাম করতে গিয়ে এযাবৎ যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ পলিটেকনিক শাখা কাউন্সিল প্রস্তুটি কমিটির আহ্বায়ক দেবাশীষ চাকমা’র সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অভিজিৎ চাকমার সঞ্চালনায় কাউন্সিল অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সুনীল ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম মহানগরের সংগঠক শুভ চাক, হিল উইমেন্স ফেডারেশন মহানগর শাখার প্রতিনিধি জেসি চাকমা, পিসিপি চবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ভূবন চাকমা ও পিসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি সোহেল চাকমা।
পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সুনীল ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে সেনাশাসন জারী রয়েছে। রাষ্ট্রীয় শাসকগোষ্ঠী সংখ্যালঘু জাতিগুলোর ওপর আধিপত্য কায়েমের পাশাপাশি জাতিসত্তাসমূহকে জাতিগত শোষণ বঞ্চনার শিকারে পরিণত করেছে। আধিপত্যবাদী শাসনব্যবস্থায় জাতিগত বিদ্বেষ ছড়িয়ে পরস্পরকে বিচ্ছিন্ন করার মধ্যে দিয়ে জাতিগত সংঘাত জিইয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে শাসক-সরকার। পিসিপি’র নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন ভূঁইফোড় সংগঠন সৃষ্টি করে শাসকগোষ্ঠী ছাত্রসমাজকে বিভ্রান্ত ও বিভক্ত করে রেখেছে। এর থেকে উত্তরণের জন্যে এবং শাসকগোষ্ঠীর এই শাসন-শোষণের নিকৃষ্ট ষড়যন্ত্রের জাল ভেঙ্গে দিতে ছাত্রসমাজকে সুবিধাবাদী, ভীরু ও কাপুরুষোচিত মানসিকতা ত্যাগ করে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের সংগ্রামে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করতে হবে।
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সংগঠক শুভ চাক বলেন, পার্বত্য মাটিতে আজ ভূমিপুত্ররা বাস্তুহারা, ভূমি হারা। সীমান্ত সড়কের নামে, রাবার কোম্পানি কর্তৃক, পর্যটন শিল্পের নামে হাজার হাজার একর পাহাড়িদের ভূমি দখল করা হচ্ছে। সেনা- শাসকগোষ্ঠীর জেল-জুলুম, অন্যায়, অত্যাচারে পাহাড়ি জনগণ আজ দিকভ্রান্ত ও ক্ষুব্ধ। এই নারকীয় তাণ্ডব থেকে মুক্তি পেতে হলে ছাত্রদেরকে অবশ্যই আন্দোলন- সংগ্রামের সাথে সম্পৃক্ত হতে হবে। ছাত্র-যুবা- তারুণ্য শক্তিই আগামী দিনের পার্বত্য জনগণের আশার আলো সঞ্চারিত করবে।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী জেসি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আজ সর্বত্র নারী ধর্ষণ, খুন, গুম, অপহরণ অব্যাহত রয়েছে। পার্বত্য জনপদে নারীরা আজ কোথাও নিরাপদে নেই। ১৯৯৬ সালে সেনাবাহিনীর লে. ফেরদৌস কর্তৃক কল্পনা চাকমা’কে অপহরণের পর এদেশের শাসকগোষ্ঠী ধর্ষণকে জাতিগত নিপীড়নের প্রতিষ্ঠানিক হাতিয়ারে পরিণত করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সমস্যা নিরসন করতে হলে নারী-পুরুষ সকলকেই একযোগে সংগ্রাম করা ব্যতীত কোন বিকল্প নেই।
পিসিপি চবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ভূবন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে রাজনৈতিক লড়াই- সংগ্রাম করতে গিয়ে আজকের দিনে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা শহীদ হয়েছিলেন। এই ঐতিহাসিক দিনে পলিটেকনিক শাখার কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে যা আগামীর সম্ভাবনাকে দৃঢ় প্রত্যয়ে স্বাগত জানাচ্ছে। আজকের ছাত্রসমাজের এই সম্ভাবনাই পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তির সনদ পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের দিকে ধাবিত করবে।
পিসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি সোহেল চাকমা বলেন, জাতীয় দুর্দিনে সংকট মোকাবেলা করার অদম্য সাহস নিয়ে সংগঠনে সম্পৃক্ত হওয়া গৌরবের বিষয়। সমাজ ও জাতির গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়ে সংগ্রাম করার মতো গৌরবোজ্জ্বল কাজ পৃথিবীর আর কোথাও নেই। ১৯৮৯ সালে লংগদু গণহত্যার শহীদদের রক্তের বীজ থেকে জন্ম নেয়া পিসিপি’র সহযোদ্ধারা সেই গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামী ইতিহাসের অংশীদার। কাজেই সুবিধাবাদীতা, আত্মকেন্দ্রীকতা ও শাসকগোষ্ঠীর প্রলোভনের মোহে আবিষ্ট না হয়ে একজন ছাত্র হিসেবে আমাদের দায়িত্ববোধ হচ্ছে চলমান অস্তিত্ব সংকটের কবল থেকে জাতিকে রক্ষা করা। সেজন্যই পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের সংগ্রামে ছাত্রসমাজকে একাত্ম হয়ে কাজ করতে হবে। জাতীয় মুক্তির লগ্নে রাজনৈতিক বিমূখতা পরিহার করে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার দায়িত্বই ছাত্রসমাজের একমাত্র লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। অন্যথায়, শাসকগোষ্ঠীর দাস হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই।
কাউন্সিল অধিবেশন শেষে কমিটি ঘোষণা ও শপথ বাক্য পাঠ করান পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি সোহেল চাকমা। এতে দেবাশীষ চাকমা সভাপতি, পার্থ খীসা সাধারণ সম্পাদক ও সূর্য চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট পলিটেকনিক শাখা কমিটি গঠন করা হয়।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন