Sign in
Sign in
Recover your password.
A password will be e-mailed to you.
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম
খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলাধীন ছোট কালাপানি(দোজরী) গ্রাম থেকে সেনা মদদপুষ্ট বোরকা পার্টি কর্তৃক উচ্ছেদ হওয়া চার ইউপিডিএফ সদস্যের পরিবারের সদস্যবৃন্দ আজ ১০ ডিসেম্বর সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বোরকা পার্টির অত্যাচারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং জানমালের নিরাপত্তার বিধানসহ বোরকা পার্টির সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধের দাবি করেছেন।
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের স্বনির্ভরস্থ পেরাছড়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে সকাল সাড়ে ১১টায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বোরকা পার্টি কর্তৃক উচ্ছেদ হওয়া চার ইউপিডিএফ সদস্যের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শ্রুতি মোহন চাকমার স্ত্রী আলপনা চাকমা (২৮), শুক চাকমার স্ত্রী, সোনারাণী চাকমা (২৩), বিজয় চাকমার স্ত্রী গুরিমিলে চাকমা (৩০) ও গোপাল চাকমার স্ত্রী সোনাবী চাকমা (২৮) তাদের ছেলে-সন্তান সহ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তাদেরকে সহযোগিতা করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি মাদ্রী চাকমা।
সংবাদ সম্মেলনে বোরকা পার্টির অত্যাচারের কাহিনী উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে তারা বলেন, গত ২ ডিসেম্বর রোজ রবিবার বিকেল আনুমানিক ২:১৫টার দিকে মায়াধন চাকমা ও অভিযান চাকমার নেতৃত্বে ৬ জন বোরকা পার্টির সদস্য আমাদের গ্রামে হানা দেয় এবং আমাদের স্বামীরা ইউপিডিএফের (ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) সাথে জড়িত একমাত্র এই কারণে আমাদের উপর অত্যাচার চালায়। তারা আলপনা চাকমাকে কাঠের লাঠি দিয়ে মারধর করে এবং তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এরপর সন্ত্রাসীরা আলপনা চাকমা, গুরিমিলে চাকমা ও সোনাবি চাকমার বাড়িঘর ভাঙচুর করে, সোনাবি চাকমার আম বাগানের দুই বছর বয়সী গাছ কেটে দেয়, ক্ষেতের শাক সবজি নষ্ট করে দেয় এবং বাড়িতে পালিত মুরগী ধরে নিয়ে যায় (দাম না দিয়ে)। তারা সোনারাণী চাকমার বৃদ্ধা স্বশুরীকে (ইউপিডিএফ সদস্য শুক চাকমার মা) হুমকি দিয়ে বলে, ‘তোমার ছেলে শুক চাকমা কোথায় থাকে? তার সাথে তোমাদের যোগাযোগ আছে। তোমার ছেলেকে নিয়ে আসবে, না হলে তোমাদের কাউকে বাঁচিয়ে রাখা হবে না। সবাইকে মেরে ফেলা হবে।‘
এই ঘটনার একদিন পর গত ৪ ডিসেম্বর রোজ মঙ্গলবার দুপুর ১:৩০টার দিকে মায়াধন চাকমা ও অভিযান চাকমার নেতৃত্বে ১৪- ১৫ জন বোরকা পার্টির সদস্য আবার হানা দিয়ে আমাদের বাড়ির দরজা, জানালা ও আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ও সরঞ্জাম ভেঙে দেয়, গুরিমিলে চাকমাকে লাঠি দিয়ে মারধর করে এবং আমাদেরকে বাচ্চা-কাচ্চাসহ জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বের করে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়। গায়ে পরা জামা-কাপড় ছাড়া কোনকিছু সঙ্গে নিয়ে যেতে দেয়নি।
বাড়ি থেকে সঙ্গে করে জিনিসপত্র নিয়ে যেতে চাইলে বোরকারা হুমকি দিয়ে বলে, ‘তোমাদের বাড়ির সকল সম্পত্তি আমরা দখল করব। এই মুহুর্তে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও। না হলে ব্রাশ ফায়ার করে মেরে ফেলতে বাধ্য হব।‘
সন্ত্রাসীরা আমাদের হুমকি দিয়ে আরো বলে, ‘তোমাদের স্বামীরা ইউপিডিএফ-এর কাজ করে। তারা যদি আমাদের কাছে স্যারেন্ডার না করে তাহলে তোমরা এখানে থাকতে পারবে না। আজকের মধ্যে এখান থেকে চলে যাও। যদি না যাও তাহলে বন্দুক দেখেছো- এই বন্দুক দিয়ে ব্রাশ করে তোমাদেরকে মেরে ফেলব।‘
লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে তারা আরো বলেন, আমরা বর্তমানে ঘরবাড়ি ও গ্রামছাড়া হয়ে শরণার্থীর মতো অন্যের বাসায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছি। আমাদের সন্তানদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা অনেক কষ্টে অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে দিন কাটাচ্ছি। সন্ত্রাসীদের ভয়ে আমরা স্থানীয় থানা ও প্রশাসনের কাছে গিয়ে আমাদের কথা বলতে পারিনি।
তারা বলেন, আমরা তো কোন দোষ বা অন্যায় করিনি। আমরা জানিনা আমাদের স্বামীরা ইউপিডিএফের মতো একটি গণতান্ত্রিক দলের রাজনীতি করলেই কেন অপরাধ হবে। বাংলাদেশের কোন আইনে আছে যে কেউ রাজনীতি করলে তার স্ত্রী ও সন্তানদেরকে ঘরছাড়া এলাকাছাড়া হতে হবে? যদি যুক্তির খাতিরে ধরেও নিই আমাদের স্বামীরা কোন অন্যায় বা অপরাধ করেছে, কিন্তু তার জন্য কি তাদের স্ত্রী হিসেবে আমাদের ও আমাদের সন্তানদের দায়ি হতে হবে? এটা কোন ধরনের অবিচার? বাংলাদেশের কোন আইনে আছে স্বামীর অপরাধের জন্য স্ত্রী-সন্তানদের শাস্তি পেতে হবে?
সংবাদ সম্মেলনে তারা জানমালের পূর্ণ নিরাপত্তাসহ আমাদের নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা, বোরকা পার্টির সন্ত্রাসীরা আমাদের সম্পত্তির ক্ষয়-ক্ষতি করেছে তার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা ও অন্যায়ভাবে উচ্ছেদের সাথে জড়িত বোরকা পার্টির সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া এবং সন্ত্রাসী বোরকা পার্টিকে ভেঙে দেয়ার দাবি জানান।