বগাছড়িতে সেটলার হামলার প্রতিবাদে নানিয়াচর ভূমি রক্ষা কমিটির সমাবেশ ও স্মারকলিপি পেশ
সিএইচটিনিউজ.কম
নানিয়াচর(রাঙামাটি): রাঙামাটির নানিয়াচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের বগাছড়িতে পাহাড়ি গ্রামে সেটলার হামলা, বসতবাড়ি, দোকানে অগ্নিসংযোগ, বৌদ্ধ বিহারে হামলা, ভাংচুর-লুটপাটের প্রতিবাদে এবং হামলাকারীদের গ্রেফতারসহ ৫ দফা দাবি পূরণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে সমাবেশ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছে নানিয়াচর ভূমি রক্ষা কমিটি।
রবিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় নানিয়াচর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ২নং নানিয়াচর ইউপি চেয়ারম্যান বিনয় কৃষ্ণ চাকমা, সাবেক্ষ্যং ইউপি চেয়ারম্যান ও ভূমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক সুপন চাকমা, ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ও নানিয়াচর ইউপি মেম্বার সেন্টু চাকমা এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিলাস চাকমা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, প্রশাসন বগাছড়ি এলাকার পাহাড়িদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তাই প্রশাসন কিছুতেই এ ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে সেটলার বাঙালিরা কিভাবে এতগুলো বাড়িতে আগুন লাগাতে পারলো সরকারকে এটা খটিয়ে দেখা দরকার বলে বক্তারা মন্তব্য করেন।
সমাবেশ থেকে বক্তারা জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এবার থেকে গ্রাম, ঘরবাড়ি ও মন্দির রক্ষা করতে নিজেদেরকে সংগঠিত হয়ে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে হবে। এ সময় বক্তারা এলাকার জনগণকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রশাসনের প্রতিও তীব্র সমালোচনা করেন।
বক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরে তাদের সাহায্যার্থে দলমত নির্বিশেষে এগিয়ে আসার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশ শেষে মিছিলযোগে নানিয়াচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাবরে ৫ দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি পেশ করা হয়। দাবিগুলো হলো:
১। অগ্নি সংযোগ হামলায় জড়িত বাঙালী সেটলার ও সেনা সদস্যদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটবেনা মর্মে গ্যারান্টি দিতে হবে।
২। ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণসহ স্ব-স্ব জায়াগায় পূনর্বাসন করতে হবে।
৩। করুণা বনবিহার থেকে লুট হওয়া বুদ্ধ মূর্তিগুলো উদ্ধার করে ফেরত দিতে হবে এবং ভবিষ্যতে কোন বৌদ্ধ বিহারে হামলা ও ভিক্ষুদের লাঞ্ছিত করা হবেনা মর্মে গ্যারান্টি দিতে হবে।
৪। বগাছড়ি, দিজেন পাড়া, পুলিপাড়া, নানাক্রুম ও বুড়িঘাট এলাকায় ভূমি বেদখল বন্ধ করতে হবে এবং বেদখলকৃত জমি ফেরত দিতে হবে। পাহাড়িদের উপর অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে তার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
৫। বগাছড়ি, দিজেনপাড়া, পুলিপাড়া, নানাক্রুম ও বুড়িঘাট এলাকা থেকে বাঙালী সেটলারদের সরিয়ে নিয়ে সমতলে পুনর্বাসন করতে হবে।
উক্ত দাবি পূরণে আগামীকাল সোমবার ২২ ডিসেম্বর থেকে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে আবারো লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি শুরু হবে। কর্মসূচি সফল করতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের জন্য ভূমি রক্ষা কমিটির নেতৃবৃন্দ সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৬ ডিসেম্বর বুড়িঘাট ইউনিয়নের বগাছড়িতে সেনাবাহিনীর সহায়তায় সেটলার বাঙালিরা পাহাড়িদের ৩টি গ্রামে ৫০টি বসতবাড়ি, ১টি ক্লাব ও ৭টি দোকান জ্বালিয়ে দেয়, বৌদ্ধ বিহারে হামলা চালিয়ে ধর্মীয় গুরুকে মারধর, বিহারের জিনিসপত্র তছনছ, বুদ্ধমূর্তি ও টাকা পয়সা লুট এবং বিহারে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা চালায়। এ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বর্তমানে শীতের প্রচণ্ড ঠান্ডায় রোগ-শোকে ভুগে অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
————-
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।