শহীদ নবায়ন চাকমার স্মরণে সাজেক ও বাঘাইছড়িতে ইউপিডিএফ’র প্রদীপ প্রজ্জ্বলন

সাজেক-বাঘাইছড়ি প্রতিনিধি।। পুর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নির্ভীক সৈনিক শহীদ নবায়ন চাকমা (সৌরভ)-এর স্মরণে সাজেক ও বাঘাইছড়িতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)।
আজ মঙ্গলবার (২৯ মার্চ ২০২২) বিকাল ৫টায় সাজেকের বাঘাইহাট, গঙ্গারাম ও বাঘাইছড়ির উপজেলা সদর এলাকায় এই প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
শুরুতে শহীদ নবায়ন চাকমাসহ সকল শহীদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
বাঘাইহাটে অনুষ্ঠিত প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানে ইউপিডিএফ সংগঠক আর্জেন্ট চাকমার সভাপতিত্বে ও কমন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাজেক থানা শাখার সভাপতি কালো বরণ চাকমা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ পিসিপি)-এর বাঘাইছড়ি উপজেলার শাখার সাধারণ সম্পাদক নিউটন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার প্রতিনিধি আশা চাকমা।

যুব নেতা কালো বরণ চাকমা বলেন, শহীদ নবায়ন চাকমা (সৌরভ) পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব রক্ষা ও অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার একমাত্র দাবি পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে একজন নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক ছিলেন। সেনাবাহিনী অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তাকে আটকের পর বর্বরোচিত নির্যাতন করে হত্যা করেছে। কিন্তু নবায়ন চাকমাকে হত্যা করা সম্ভব হলেও তার লালিত স্বপ্ন, চেতনা কখনো মুছে যাবে না। জুম্ম জনগণ তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে লড়াই চালিয়ে যাবে। তিনি শাসকগোষ্ঠির সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে যুব সমাজ ও ছাত্র সমাজকে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান
নিউটন চাকমা বলেন, সেনাবাহিনী কর্তৃক একের পর এক আন্দোলনকারী নেতা-কর্মীদের বিচার বহির্ভুতভাবে হত্যা স্পষ্টতই মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। তিনি নবায়ন চাকমা হত্যাসহ সেনা হেফাজতে এ যাবত সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।
তিনি বলেন, যতই হত্যা, নিপীড়ন-নির্যাতন চালানো হোক না কেন পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিকামী জনতা ও ছাত্র সমাজ পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা না হওয় পর্যন্ত ক্ষান্ত হবে না। তারা ঐক্যবদ্ধভাবে শাসকগোষ্ঠির সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ইউপিডিএফ সংগঠক আর্জেন্ট চাকমা বলেন, সরকার ও সেনাবাহিনী মনে করে একজন সংগ্রামী নেতাকে হত্যা করতে পারলেই আন্দোলন দমন করা যাবে। কিন্তু তাদের এ চিন্তা ভুল। হত্যা করে, দমন-পীড়ন চালিয়ে কোন ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমিয়ে রাখা যায় না। পার্বত্য চট্টগ্রামে আমাদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনও কোন অপশক্তি দমিয়ে রাখতে পারবে না। অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলমান থাকবে।
তিনি বলেন, সরকার পার্বত্য চুক্তির কথা বলে জুম্মজনকে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে চায়। ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত জিইয়ে রেখে ‘জুম্ম দিয়ে জুম্ম ধ্বংসের খেলা’ খেলে জুম্মদের ধ্বংস করে দিতে চায়। যে চুক্তি দুই যুগেও বাস্তবায়ন হয় না সে চুক্তি নিয়ে জনগণ আর কোন আশা করতে পারে না। তাই সরকারকে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবি মেনে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি শহীদ নবায়ন চাকমাকে হত্যার শোককে শক্তিতে পরিণত করে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার করার জন্য সর্বস্তরের জনগণসহ ছাত্র-যুবক-নারী সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানে প্রায় ৩ শত নারী পুরুষ অংশগ্রহন করেন। অনুষ্ঠান শেষে একটি র্যালি বের করা হয়।
এদিকে, একই ব্যানারে সাজেকে গঙ্গারামেও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়েছে। সোহেল চাকমার সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক ছদক চাকমা।

ছদক চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা হলেই তবে শহীদ নবায়ন চাকমার আত্মবলিদান সার্থক হবে। সেজন্য আমাদের লড়াই আরো বেগবান করতে হবে।
অপরদিকে, বাঘাইছড়ি উপজেলা সদর এলাকায় অনুষ্ঠিত প্রদীপ প্রজ্বলন অনুষ্ঠানে রিপন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক রিয়েল চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি রত্নজোতি চাকমা।
বক্তারা শহীদ নবায়ন চাকমা (সৌরভ)-কে গভীরভাবে স্মরণ করেন। তারা বলেন, শহীদ নবায়ন চাকমার রক্ত কখনো বৃথা যেতে দেব না। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ তার আত্মবলিদান থেকে শক্তি সঞ্চার করে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সফল করবে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন