সেনাবাহিনীর প্রবল বাধায় শোকসভা প্রতিবাদ সভায় পরিণত
প্রতিবাদমূখর পরিবেশে রমেল চাকমার স্মরণে নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠিত
নান্যাচর: রাঙামাটির নান্যাচরে সেনাবাহিনীর প্রবল বাধার মুখে আজ ২ মে ২০১৭, মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সম্মিলিত নাগরিক সমাজের উদ্যোগে পাতাছড়ি স্কুল মাঠে সেনা নির্যাতনে মৃত্যুর শিকার নান্যাচর কলেজের শিক্ষার্থী ও পিসিপি নেতা রমেল চাকমার স্মরণে নাগরিক শোকসভা প্রতিবাদমূখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় সেন্টু চাকমার সঞ্চালনা ও নান্যাচর উপজেলা প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রীতিময় চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, ১ নং সাবেক্ষ্যয় ইউপি চেয়ারম্যান সুপন চাকমা (সুশীল জীবন), ২নং নান্যাচর ইউপি চেয়ারম্যান জ্যোতিলাল চাকমা, ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক মাইকেল চাকমা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অনিল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজলী ত্রিপুরা ও রামহরি পাড়ার মহিলা কারবারী শান্তনা চাকমা প্রমুখ।
সেনাবাহিনী শোকসভায় অংশগ্রহণকারীদের বাধা দেয়ার কারনে সর্বস্তরের জনসাধারণ(বিশেষত নারী সমাজ) প্রতিবাদমূখর হয়ে উঠেন। এ সময় শোকসভা প্রতিবাদ সভায় পরিণত হয়। সভায় নান্যাচর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় দুই সহস্রাধিক সুশীল সমাজ, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, চাকরীজীবী, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী ও সকল পেশাজীবি মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রণ করেন।
সভার শুরুতে শহীদ রমেল চাকমার উদ্দেশ্যে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
শোকসভায় বক্তারা বলেন গতকাল পাতাছড়ি এলাকা থেকে পিসিপি’র রাঙামাটি জেলা শাখার সহ সাধারণ সম্পাদক রিপন আলো চাকমাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ সকাল থেকেই শোকসভাস্থলে যাওয়ার বিভিন্ন রাস্তায় সেনাবাহিনী অবস্থান করে সভায় অংশগ্রহণে সাধারণ জনগণকে হুমকি ও বাধা প্রদান করে এবং দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করে (পরে নারী সমাজে প্রতিবাদের মুখে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়)। এছাড়াও সকাল ১০.৩০ টার দিকে রাঙামাটি থেকে আসা ছয় জনের একটি সাংবাদিক টিমকে কুদুকছড়ি ক্যাম্পে আটকিয়ে জোর করে ফেরত পাঠায় এবং ১১.৪০ টার সময় রমেলের পরিবারবর্গ, আত্মীয়-স্বজন ও সাধারণ এলাকাবাসীসহ তিনটি ট্রলারে করে প্রায় দুই শতাধিক লোক এবং কাউখালী উপজেলার ২নং ফটিকছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ ছয় জনের টিমকে বুড়িঘাট ক্যাম্পের সেনাবাহিনীরা বুড়িঘাট বাজারে শোক সভায় অংশগ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যার যার জায়গার ফিরে যেতে বাধ্য করে। সেনাবাহিনীর এসব কার্যকলাপে বক্তারা শোকসভা থেকে তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানান।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, গত ৫ এপ্রিল নান্যাচর জোন কমাণ্ডার মোঃ বাহলুল আলম ও মেজর তানভীর নেতৃত্বে সেনাবাহিনী সদস্যরা থানায় কোন অভিযোগ বা মামলা না থাকা সত্বেও উপজেলা এলাকা থেকে ছাত্র নেতা শহীদ রমেল চাকমাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে। পরে তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে হত্যা করে। বক্তারা এই বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের কাছে আহ্বান জানান।
প্রতিবাদ সভা থেকে বক্তারা অবিলম্বে ছাত্র নেতা রমেল চাকমা হত্যায় জড়িত সেনা কর্মকর্তা সহ অন্য সকল সেনাদস্যদের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির মাধ্যমে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং রমেলের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ সহ পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা প্রশাসন প্রত্যাহার এবং সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সকল পেশাজীবী জুম্মদের অন্যায় গ্রেফতার, নির্যাতন, নারী ধর্ষণ, খুন ও গুম বন্ধ করার জোর দাবি জানান।
শোকসভা থেকে রমেল হত্যা প্রতিবাদ কমিটি ও পিসিপি যৌথভাবে নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে- মে – জুন ২০১৭ দুই মাস পর্যন্ত নান্যাচর বাজার বয়কট, দাবি পূরণ না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বয়কট; যে কোন সময় যে কোন জায়গায় মানববন্ধন; ১০ মে বৈশাখী পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে শহীদ রমেল চাকমার স্মরণে খাগড়াছড়িতে শোক সভা ও সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এবং ১৪ মে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি পেশ।
———————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।