শহীদ বিপুল-সুনীল-লিটন-রহিনদের স্মরণে খাগড়াছড়িতে স্মরণসভা

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
শহীদ বিপুল-সুনীল-লিটন-রুহিনদের স্মরণে খাগড়াছড়িতে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
“শহীদদের রক্তস্নানে জেগে ওঠো বীরের বেশে, যুক্ত হও পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াইয়ে” এই শ্লোগানে বুধবার (১১ ডিসেম্বর ২০২৪) বেলা ২:৩০টার সময় ‘নারকীয় হত্যার’ ১ বছর উপলক্ষে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ), হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) ও ইউপিডিএফ’র যৌথ ব্যানারে এই স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।
স্মরণসভা স্থলে প্রদর্শন করা হয় চার শহীদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের স্থিরচিত্র।
স্মরণসভার শুরুতে “আমরা করবো জয়” গানটি বাজিয়ে একটি চৌকস টিম ইউপিডিএফের দলীয় উত্তোলন করে।

এরপর শহীদদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক ও ফুল দিয়ে দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এত প্রথমে ইউপিডিএফের পক্ষ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর গণসংগঠনসমূহ ও শহীদ পরিবারবর্গ এবং পরে একে একে শিশুরাও শহীদদের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।




শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাইরেন বাজিয়ে শহীদদের সম্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
নিরবতা পালন শেষে অতিথিবৃন্দ মঞ্চে আসন গ্রহন করেন।
স্মরণসভায় ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি সদর ইউনিটের সংগঠক লালন চাকমা শহীদদের সংক্ষীপ্ত জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন এবং তার সঞ্চালনায় ও ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি ইউনিটের সমন্বয়ক অংগ্য মারমার সভাপতিত্বে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বরুন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ চাকমা ও শহীদ লিটন চাকমার বড়ভাই মতি বিকাশ চাকমা।
এসময় সৃতিচারন করে আলোচনা করেন কলেজ শিক্ষার্থী তুফান চাকমা, তেরেসা চাকমা, বিবেক চাকমা, নয়ন চাকমা এবং নিজের লেখা কবিতা পাঠ করেন দেবাশিষ চাকমা।

তুফান চাকমা বলেন, চার শহীদের মধ্যে বিপুল ও লিটনের সাথে আমার পরিচয় ছিল। তারা ছাত্র ও যুব সমাজের কাছে বেশি পরিচিত। পাহাড়ে যখন কোন নির্যাতন হয়, ভুমি বেদখল হয় তখন উৎসাহ নিয়ে তাদের সাথে মিছিল সমাবেশে অংশ নিতাম।
তেরেসা চাকমা বলেন, আমিও শহীদ পরিবারের একজন। আমার বাবাকেও সেনা সৃষ্ট সন্ত্রাসীরা হত্যা করে। আমিও বাবার মত দেশ ও জাতির জন্য কাজ করে যাব। আমার বাবার যে রক্ত ঝরেছে সে রক্ত থেকে যেন আরো নতুন বিপ্লবীর জন্ম হয়। আমিও বাবার মত সংগঠনের কাজ করে যাব এবং যাতে তা করতে পারি তার জন্য আশির্বাদ করবেন।
বিবেক চাকমা বলেন, চার শহীদের মধ্য বিপুল চাকমার সাথে আমার নিয়মিত কথা হত। ২০১২ সালে তার সাথে আমার দেখা হয়। তখন থেকে আমি তার সাথে বিভিন্ন মিছিল সমাবেশে অংশ নিয়েছিলাম। বিপুল, লিটন তারা শুধু চাকমাদের জন্য আন্দোলন করেনি, তারা সকল জাতিসত্তাদের জন্য আন্দোলন করে গেছেন।
ইউপিডিএফ নেতা অংগ্য মারমা বলেন, পাহাড়ে আমাদের সংগ্রাম ন্যায় এবং সত্যের পক্ষে। নিপীড়িন-শোষিত পাহাড়িদের অধিকার আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছে ইউপিডিএফ। ইতিহাস বলে, যারা সত্য এবং জনগণের জন্য কাজ করেন তারাই শত নিপীড়নের পরও সফল হয়। আমরাই পার্বত্য চট্টগ্রামে একদিন পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করে পাহাড়িদের অধিকার নিশ্চিত করবো।

তিনি আরো বলেন, বিপুল, সুনীল, লিটন, রুহিনসহ অসংখ্য সহযোদ্ধাকে হত্যার পরও আমরা আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াইনি। আমাদের আন্দোলন দমন করা যায়নি। শহীদের রক্তের বীজ থেকে জম্ম হবে শত শত বিপুল চাকমা এবং তারাই আমাদের পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাবে।
নীতি চাকমা বলেন, ঘাতকের নির্মমতায় শহীদ বিপুল চাকমাসহ চার সহযোদ্ধার মৃত্যু সারা পার্বত্য চট্টগ্রামে শোকের ছায়া পড়েছে। যা এখনো পর্যন্ত পাহাড়ের চারিদিকে বিপুল চাকমার স্মৃতি রেখে দিয়েছে শত শত নারী পুরুষ ও অসংখ্য ছাত্র ছাত্রী।
সেনাবাহিনীর কর্তৃক পরিচালিত মুখোশ সন্ত্রাসীরা বিপুল চাকমাদের হত্যা করছে ঠিকই কিন্তু মুছে দিতে পারেনি তাদের আদর্শ ও চেতনা। শত শত ছাত্র-ছাত্রী বিপুল চাকমার লালিত চেতনায় শাণিত হয়ে আগামীতে লড়াই-সংগ্রামে সামিল হবে। তারাই বিপুল চাকমার অপূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে।
বরুন চাকমা শহীদের স্মরণ করে বলেন, শত্রুর আক্রমণে নিজ মাতৃভূমিতে শহীদ বিপুল-সুনীলরা আমার দীর্ঘ সময় ধরে পরিচিত ও সম্পর্ক। তাদের সাথে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক কাজে এক সাথেই ছিলাম, একসাথে খেয়েছি, থেকেছি। কিন্তু সেনা মদদপুষ্ট মুখোশ সন্ত্রাসী কর্তৃক বিপুল চাকমাদের এইভাবে হারাতে হবে কখনো ভাবতে পারিনি। বিপুল চাকমারা সবাইকে দেখিয়ে গেছেন অধিকারের জন্য কীভাবে আত্মত্যাগ করতে হয়।

অনিমেষ চাকমা বলেন, মানুষের মুক্তির আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত আপোষহীন সংগ্রামে নিজেকে প্রফুল্ল চিত্তে রাখতে হয়। যেটা বিপুল-সুনীল-লিটনসহ আরো অনেক সহযোদ্ধা প্রমাণ করে গেছেন। শাসকগোষ্ঠি ও সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র পাহাড়ের তরুণ প্রজন্মের নেতা কর্মীদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করছে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের সংগ্রামকে ধ্বংস করার জন্য। কিন্তু হত্যা ও দমন-পীড়ন চালিয়ে জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন কখনো ধ্বংস করা যায় না। সহযোদ্ধা শহীদ বিপুল চাকমার অনুসারী শত শত ছাত্র-তরুণ এখনো রাজপথে অবিচল রয়েছেন এবং আগামীতেও থাকবেন।
স্মরণসভা ছাড়াও খাগড়াছড়ি সদরের বিভিন্ন স্থানে এলাকাবাসীর উদ্যোগে শহীদদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও ফানুস উত্তোলন করা হয়।

সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।