ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় সদস্য দেবদন্ত ত্রিপুরার মৃত্যু: পার্টির সভাপতি ও সম্পাদকের গভীর শোক প্রকাশ
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০২৩

দীর্ঘদিন মরণব্যাধি ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর কেন্দ্রীয় সদস্য দেবদন্ত ত্রিপুরা (৪৬) মৃত্যুবরণ করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন ২০২৩) বিকেল ১টা ৫০ মিনিটে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের সুরেন্দ্র মাস্টার পাড়ার নিজ বাড়িতে তার জীবনাবসান হয়। এর আগে তিনি ঢাকায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। গতকাল রাতে তাকে ঢাকা থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
২০২১ সালে দেবদন্ত ত্রিপুরার পেটে টিউমার ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর চিকিৎসা গ্রহণ করে কিছুটা সুস্থ হন। তবে পরের দিকে আবারো অসুখের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে তিনি ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে পর পর চিকিৎসা গ্রহণ করেন। সর্বশেষ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে তিনি নিজ বাড়িতে ফেরার ইচ্ছা পোষণ করেন। গতকাল (বুধবার) কর্তব্যরত চিকিৎসকরা হাসপাতাল থেকে তাকে রিলিজ দিলে তাকে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।

পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য দেবদন্ত ত্রিপুরার মৃত্যুতে ইউপিডিএফের সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা ও সাধারণ সম্পাদক রবি শংকর চাকমা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
সংবাদ মাধ্যমে দেয়া এক শোক বার্তায় নেতৃদ্বয় বলেন, ‘দেবদন্ত ত্রিপুরা পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকারহারা জুম্ম জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সংগ্রামে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি ১৯৯০ দশকে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাথে সাথে যুক্ত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে ইউপিডিএফ গঠিত হলে তিনি তাতে যোগ দেন এবং বিভিন্ন জায়গায় সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালে তিনি গ্রেফতার হয়ে জেলও খেটেছেন। ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউপিডিএফের ১ম জাতীয় কংগ্রেসে দেবদন্ত ত্রিপুরা দলের কেন্দ্রীয় সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর অকাল মৃত্যুতে পার্টি একজন একনিষ্ট সংগঠককে হারালো।’
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় দেবদন্ত ত্রিপুরার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানান।
এদিকে, গত ২৯ মে হাসপাতালে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা ও শুভাশীষ চাকমা দেবদন্ত ত্রিপুরার সাথে দেখা করতে গেলে তিনি তাদের কাছে তার শেষ ইচ্ছা ব্যক্ত করেন এবং তাদেরকে নীতি-আদর্শের ভিত্তিতে আন্দোলনে অবিচল থাকার উপদেশ দেন।
এ সময় তিনি তাদেরকে বলেন, আমি পার্টিকে আন্দোলনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তা ভঙ্গ করিনি। মনপ্রাণ দিয়ে পার্টির কাজ করেছি। তোমরাও জাতির জন্য ভালোভাবে কাজ করে যেও।

দেবদন্ত ত্রিপুরা অন্তিম শয়নে অমল ও শুভাশীষকে আরও বলেন: ‘প্রসিত খীসা আমার নেতা। তোমরা বেঈমানী করবে না, কাজ কর। তোমরা কাজ করে চল, অভিজ্ঞতা অর্জন করে চল। জাতির সাথে বেঈমানী করো না, আমি মরণের আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছি, আমার দেয়ার মতো আর কিছু নেই।’
এ সময় সভাপতি প্রসিত খীসার কাছে তার বক্তব্য কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আগে তাদেরকে বলেছিলাম, পার্টি না বাঁচলে দন্ত বাঁচবে না। আমি আমার প্রতিশ্রুতি পালন করেছি। আমি পার্টির সাথে বেঈমানী করিনি, এটাই আমার শান্তি।’
তিনি তাঁর এলাকায় স্থাপিত স্কুলটি দেখাশোনা করা এবং এলাকার জনগণ যাতে পার্টির সাথে সম্পৃক্ত হয় তা বলে যান। একই সাথে তিনি মৃত্যুর পর তার দাহক্রিয়ার কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করা ও তার স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে দেয়ার অন্তিম ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

দেবদন্ত ত্রিপুরা ১৯৭৮ সালের ২০ এপ্রিল খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের সুরেন্দ্র মাষ্টার পাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৃত সেন কুমার ত্রিপুরা ও মাতার নাম মৃত বিরতী ত্রিপুরা। পিতা-মাতার ৩ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।
দেবদন্ত ত্রিপুরার শিক্ষা জীবন শুরু হয় জোরমরম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর তিনি মুনিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় (ক্লাস ৬-৮ পর্যন্ত ) ও খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়েও পড়াশোনা করেন। তিনি খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৩ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন এবং ১৯৯৫ সালে হাটহাজারী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।
হাই স্কুলে পড়ার সময় থেকে তিনি ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং তৎকালীন পিসিপির সাথে যুক্ত হয়ে ভাইবোনছড়া বিশেষ থানা শাখার সেক্রটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে নয়া পার্টি ইউপিডিএফ গঠিত হলে তাতে যোগদান করেন।
১৯৯৮ জীবিকা ত্রিপুরার সাথে তিনি বিবাহে বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে।
(প্রেস বিজ্ঞপ্তি)
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন