নান্যাচরে প্রশাসনের নাকের ডগায় সেনা মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে জনগণ অতিষ্ঠ

0

নান্যাচর প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩

রাঙামাটির নান্যাচর উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে সেনা মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় সন্ত্রাসীরা এসব চাঁদাবাজি করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নেয়ার অভিযোগ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের ছত্রছায়ায় এসব সন্ত্রাসীরা প্রতিদিন ভোর হতে গভীর রাত পর্যন্ত নান্যাচর উপজেলা সদর, নান্যাচর বাজার এলাকা, ডাকবাংলা ঘাট (কৃষি সম্প্রসারণ অফিস), ইসলামপুর বউ বাজার, নানাক্রুম, পুলিশ ক্যাম্প, কুকুরমারা, খাল্যাবাড়ি, বগাছড়ি রাস্তামাথা, পুরান বাজার (হাসপাতাল এলাকা) এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্র দেখিয়ে চাঁদা আদায় করে থাকে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চাঁদা দিতে বাধ্য করে। অপরদিকে সেনাবাহিনী নিজেরাই চাঁদার পরিমাণ ঠিক করে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে প্রশাসনকে অবহিত করলেও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয় না বলে স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়িরা অভিযোগ করেন।

এসব স্থানে যারা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করে তাদের কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। এরা হলেন- ১. সুমন চাকমা (৪১) পিতা- পূর্ণ কুমার চাকমা, গ্রাম- হাজাছড়ি, ভুইয়াদাম ৪ নং ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন; ৩. মিকেল চাকমা ওরফে নিখিল (৩৮), পিতা সোনামুনি চাকমা, গ্রাম মাইচছড়ি ৪ নং ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন, ৪. শুক্র কুমার চাকমা (ভুলো), বয়স: ৫২, পিতা-মৃত অজ্ঞাত, গ্রাম- হাজাছড়ি পশ্চিম পাড়া, ৪নং ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন নান্যাচর; ৫. চালু চাকমা (৪৩) পিতা- অজ্ঞাত, গ্রাম-বেতছড়ি তালুকদার পাড়া. ২নং নান্যাচর সদর ইউনিয়ন, ৬. চিজি চাকমা (৩০) পিতা-অজ্ঞাত ও ৭.দীলিপ চাকমা (৩৬), পিতা- অজ্ঞাত।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জনপ্রতিনিধির সাথে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা বলেন ‍“আমরা ঢাল নাই, তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার। আমরা না পারছি জনগণের নিরাপত্তা দিতে, না পারছি সহ্য করতে। এসব চাদাঁবাজি বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করারও সাহস পাই না আমরা। কারণ একদিকে জীবনের ভয়, অন্যদিকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদেরকে হয়রানি করা হয়। এখনো বিভিন্ন জনপ্রতিনিধির নামে কয়েকটি মিথ্যা মামলা চলমান রয়েছে। ফলে অনেকে ঠিকমত নিজেদের দায়িত্বও পালন করতে পারছে না”।

তারা আরো বলেন, ‍প্রশাসন কৃত্রিম সমস্যা সৃষ্টি করে ফায়দা লুটার কাজে ব্যস্ত রয়েছে। প্রশাসনের যদি মদদ না থাকতো তাহলে কারোর পক্ষে কি এভাবে প্রকাশ্যে সশস্ত্রভাবে চাদাঁবাজি করা সম্ভব হতো?

সরকার দলীয় এক নেতাও এসব চাদাঁবাজি বন্ধের জন্য সেনাবাহিনীকে অনুরোধ করায় তিনিও নান্যাচর উপজেলা সদর থেকে রাঙামাটিতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন বলে তারা জানান।

উপজেলার বিভিন্ন মৌসুমী ব্যবসায়ির সাথে কথা বলে জানা গেছে, এসব চাঁদাবাজির বিষয়ে তারা সেনাবাহিনীর কাছে বহু অভিযোগ দিয়েছেন, কিন্তু কোন লাভ হয়নি। বরং ‘সেনাবাহিনী নিজেরাই চাদাঁবাজদেরকে কত টাকা দিতে হবে তা নির্ধারণ করে দেয়’ এমন অভিযোগ করে তারা হতাশা ব্যক্ত করেন।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ি বলেন,“আমাদের মনে হয় সেনাবাহিনীও এসব চাঁদার একটা অংশ পেয়ে থাকে। না হলে এমনভাবে সেনা ক্যাম্পের পাশে প্রকাশ্যভাবে সন্ত্রাসীরা চাঁদা আদায় করতে পারতো না। প্রশাসনের এমন ভূমিকায় আমরা হতবাক হচ্ছি”।

এসব এলাকার লোকজনের কাছ থেকে এ বিষয়ে জনতে চাইলে অনেকে বলেন, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনই এসব সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে চাঁদাবাজি, খুনসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। ফলে আমরা এ বিষয়ে কথা বলার সাহস পাই না। কেউ কোন কিছু বললেই অপহরণের শিকার হয়ে নির্যাতনসহ মোটা অংকের মুক্তিপণ দিতে হয়, অন্যথায় জীবনের নিশ্চয়তাও থাকে না। প্রশাসন জনগণের নিরাপত্তা প্রদান না করে উল্টো সন্ত্রাসীদের নিরাপত্তা দেয় বলেও তাদের অভিযোগ।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More