খাগড়াছড়িতে ‘সংস্কারবাদী’ বিরোধী গণবিষ্ফোরণ : সংস্কারবাদীদের কৌশলগত ক্ষমা প্রার্থনা

0

ডেস্ক রিপোর্ট॥ খাগড়াছড়িতে গতকাল টানা দ্বিতীয় দিনের মতো চলা অভূতপূর্ব ব্যাপক গণবিক্ষোভের মুখে চার গ্রামবাসীকে অপহরণের দায় স্বীকার করে সংস্কারবাদীরা তাদের মুক্তি দিয়ে জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বাধ্য হয়েছে।

তবে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী পেরাছড়ার এক শিক্ষক সেনা-মদদপুষ্ট সংস্কারবাদীদের এই ক্ষমা প্রার্থনাকে তাদের ‘গা বাঁচানোর কৌশল, প্রতারণাপূর্ণ ও কৌশলগত পশ্চাদপসরণ’ বলে মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেন, ‘সংস্কারবাদ’ হলো ‘ভয়ংকরবাদ’। এরা শক্তের ভক্ত ও নরমের যম। চাকমা কথায় বলে ‘নরম নরম পেলে আড়উয়্য খায়, দর’দর’ পেলে কুরেন্দিয়্য ন-যায়।’ জনগণের সংগঠিত শক্তি দেখেই সংস্কারবাদীরা তাদের ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছে, জনগণকে ভালোবেসে নয়।

গতকাল বিকেলে খাগড়াছড়ি শহরের তেঁতুল তলায় ডেকে জনপ্রতিনিধি ও মুরুব্বীদের কাছে সংস্কারবাদী-নব্য মুখোশ বাহিনীর সর্দার জোলেয়্যা চাকমা ওরফে তরু চারজনকে অপহরণ ও দোকান বন্ধ করে দেয়ার ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

এ সময় ভাইবোনছড়া ইউপির চেয়ারম্যান পরিমল ত্রিপুরা, পেরাছড়া ইউপি চেয়ারম্যান তপন বিকাশ ত্রিপুরা, ভাইবোনছড়া ইউপি মেম্বার করুণাময়ী চাকমা, ধনু চন্দ্র ত্রিপুরা, শ্যামল কান্তি ত্রিপুরা এবং গাছবানের কার্বারী পূর্ণ ভূষণ ত্রিপুরা উপস্থিত ছিলেন।

পরিমল ত্রিপুরা ইউপিডিএফের এক নেতার কাছে স্বীকার করেন, তারা সংস্কারবাদী নেতাদের সাথে দেখা করেছেন এবং সংস্কারবাদীরা তাদের কাছে অপহরণের দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন।

পরিমল ত্রিপুরার উদ্ধৃতি দিয়ে ইউপিডিএফ নেতা বলেন, ইতিপূর্বে সংস্কারবাদীরা পেরাছড়া থেকে পানছড়ি পর্যন্ত দোকান বন্ধ রাখার যে হুমকি দিয়েছিলেন তাও ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন এবং দোকান খোলা রাখা যাবে বলে জানিয়েছেন।

পেরাছড়ার উক্ত শিক্ষক আরো বলেন, সংস্কারবাদীরা ক্ষমা চেয়েছে ভালো কথা, কিন্তু তাদেরকে অবশ্যই খুন, অপহরণ, নির্যাতন, সেনাবাহিনীর দালালি এগুলো বন্ধ করতে হবে।

‘তারা আন্দোলন না করলে না করুক, কিন্তু তারা সেনাবাহিনীর গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করবে কেন? এটাতো আমরা মেনে নিতে পারি না।’

মাধুরী ত্রিপুরা নামে এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ না দেখালে সংস্কারবাদীদের সুর এভাবে নরম হতো না, আর মুক্তিপণ না দিয়েও ওই চারজনও ছাড়া পেতো না।’

তিনি সংস্কারবাদীরা আর্মিদের খপ্পড় থেকে বেরিয়ে না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন।

তার সাথে সুর মিলিয়ে অরিন্দম ত্রিপুরা, সমর জ্যোতি চাকমা ও মিকি চাকমাসহ আরো অনেকে মনে করেন, জনগণের আন্দোলনের চাপেই সংস্কারবাদীরা চার জনকে ছেড়ে দিতে ও দোকান বন্ধের হুমকি তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে। অথচ একদিন আগেও সংস্কারবাদীদের কথার সুর ছিল চড়া।

তারা বলেন, ইতিপূর্বেও সংস্কারবাদীরা অনেক নিরীহ লোকজনকে অপহরণ করেছে, (ইউপিডিএফের হিসাবে মধ্য নভেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত ৭৫ জন) মুক্তিপণ আদায় করেছে, হুমকি-ধামকি দিয়েছে, কই তখনতো তারা জনগণের কাছে ক্ষমা চায় নি।

ইউপিডিএফের এক নেতা মন্তব্য করে বলেন, ‘তারা জনগণের শক্তির এখনো কী দেখেছে। এটাতো (খাগড়াছড়ির গণবিক্ষোভ) সামান্য মাত্র। যখন তাদের বিরুদ্ধে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়বে, তখন তাদের কী দশা হবে তারা কি একবার ভেবেছে?’

‘সংস্কারবাদীদের মনে রাখতে হবে চোরের দশদিন গৃহস্থের একদিন, সংস্কারবাদী জুম্ম রাজাকারদের দশদিন আর জনগণের একদিন। এই একদিনে তারা সুদে আসলে সব দেনাপাওনা শোধ করবে।’
———————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More