নাইক্ষ্যংছড়িতে প্রকৌশলীর নেতৃত্বে এডিবির ২৪ লাখ লুটপাটের ঘটনায় তোলপাড়

0

সিএইচটিনিউজ.কম
নাইক্ষ্যংছড়ি১বান্দরবান প্রতিনিধি : পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে উপজেলা প্রকৌশলির নেতৃত্বে চলতি অর্থ বছরের বিশেষ বরাদ্দের ২৪ লাখ টাকা লুটপাটের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দ হওয়া এ টাকার ভাগ-ভাটোয়ারা নিয়ে উপজেলা সদরে চলছে নানা গুঞ্জন এবং আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে গত ৩০ জুন এ টাকার খরচের সময় সীমা শেষ হলেও উপজেলায় কোন কাজ না করেই সমস্ত টাকা ব্যাংক থেকে উঠিয়ে নিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। মূলত লুটপাটের রোড়ম্যাপে উঠিয়ে নেন এ সব সরকারী টাকা। তবে উপজেলা প্রকৌশলী কাজ না করে ব্যাংক থেকে টাকাগুলো উঠানোর কথা স্বীকার করলেও ভাগ-ভাটোয়ারার কথা অস্বীকার করেছেন।

এদিকে একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র মতে, এডিবির ২৪ লাখ টাকা দেশের সব উপজেলার মতো নাইক্ষ্যংছড়িতেও পৌঁছে ১২ জুন। অন্যান্য উপজেলায় সরকারী বিধি মোতাবেক টেন্ডার আহবান করা হলেও নাইক্ষ্যংছড়িতে তা করা হয়নি রহস্যজনক কারণে। বরং উপজেলা প্রকৌশলি সহ এর সাথে জড়িত অন্যান্যরা দীর্ঘ সূত্রিতা করে সরকারী বিধির টেন্ডারের বদৌলতে ১৮ জুন ২০টা ৩০ মিনিটের দিকে একটি গোপন মিটিং দেখিয়ে এ টাকাগুলো ফন্দি করে ব্যাংক থেকে উত্তোলনের জন্য রেজুলেশনকরেন। আর সে আয়োজনে ৫ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য এবং চেয়ারম্যানদেরকেও শরীক করা হয়।

এ সব নেতাদের সাথে কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা এবং উপজেলা পরিষদের একাধিক প্রভাবশালী সদস্য মনগড়া কিছু প্রকল্প দেখিয়ে বেআইনীভাবে এ টাকা জায়েজ করার সিদ্ধান্ত নেন। আর এ নিয়ে সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (৩০ জুন) উপজেলার সমন্বয় কমিটিতে সাফাই বক্তব্য রাখেন উপজেলা প্রকৌশলি মো.জামির হোসেনসহ কয়েকজন। অথচ টাকা গুলো এর আগেই তারা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে ফেলেছেন। যা নাইক্ষ্যংছড়ি সহ সর্বত্র সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট হয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষ ও ঠিকাদার সহ অনেকে এ ধরণের প্রকাশ্য আইন ভংঙ্গের ঘটনায় ধিক্কার জানিয়েছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার বিষয়ক সম্পাদক মো.শাহ আলম আক্ষেপের সুরে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সারাদেশে উন্নয়নের জন্যে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে। আর কিছু দূর্নীতিবাজ চক্র এসব টাকা লুটপাট করে যাচ্ছে। নাইক্ষ্যংছড়িতে এডিবি’র ২৪ লাখ টাকা ভাগ-ভাটোয়ারার আয়োজন তারই দৃষ্টান্ত।

তিনি আরো বলেন, প্রকাশ্যে টেন্ডার না দিয়ে এ টাকা ৩০ জুনের মধ্যে কাজ সম্পন্নের সরকারী আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গোপনে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেয়ার ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। এ সব প্রকাশ্য অনিয়মের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন সহ সকলের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
জানতে চাইলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু শাফায়াৎ মুহাম্মদ শাহে দুল ইসলাম জানান, প্রকাশ্য টেন্ডার এবং ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন সবই সরকারী বিধান। কিন্ত ফেরৎ যাওয়ার ভয়ে নাইক্ষ্যংছড়িতে কাজ না করে হলেও ৩০ জুনের আগেই টাকা গুলো ব্যাংক থেকে তোলা হয়েছে বলে তিনি জানেন।

এদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রকৌশলি মো.জামির হোসেন জানান, তিন কারনে তিনি এবং সংশ্লিষ্টরা এ টাকা তুলে নিয়েছেন। (১) জনগনের উপকারের জন্যে ডিও টাইমে ব্যাংক থেকে এ টাকা উত্তোলন করা হয়। (২)সরকারী সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের কারনে (৩) ৩০ জুনের মধ্যে এ ২৪ লাখ টাকা যথাযথভাবে ব্যায়ের বিধি বিধান মানা সম্ভব না হওয়ায় এ টাকা তোলা হয়েছে কাজ না করেই।

অন্যদিকে উপজেলা পরিষদ চুক্তিনামা ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট এ্যাক্ট ২০০৬ ও পিপিআর-২০০৮ অনুসারে সরকারের যে কোন কাজ ২ লাখ টাকার উর্ধ্বে হলে ২টি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ্যে বিজ্ঞাপন দেয়ার বিধানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য উপজেলায় যারা পত্রিকায় দরপত্র আহবান করেছেন তারা গোঁজামিল করে এ সব করেছে। মূলত: তারা আইন না মেনেই এ বিষয়ে সব কিছু করে যাচ্ছে!
——————-

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More