নান্যাচরে পিসিপি’র ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
নান্যাচর প্রতিনিধি ।। রাঙামাটির নান্যাচর উপজেলায় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে পিসিপি নান্যচর উপজেলা শাখা।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ ২০ মে ২০২১ পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ নান্যাচর উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি মনোবি চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক লুইস চাকমার সঞ্চালনায় এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর সংগঠক গিরি চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য তুলতুল চাকমা, রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তনুময় চাকমা, পিসিপি’র চবি শাখার প্রতিনিধি সোহেল চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নান্যাচর উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি তুজিম চাকমা।
সভায় প্রারম্ভিক আলোচনা করেন পিসিপি নান্যচর উপজেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক শুভ চাকমা।
আলোচনা সভা শুরুর আগে দলীয় সংগীত ‘পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রী দল’ গানটি পরিবেশনের মাধ্যমে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
পরে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন নান্যাচর উপজেলা শাখার সহ-সম্পাদক সুফলা চাকমা। শোক প্রস্তাব শেষে জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম করতে গিয়ে যারা বীরদর্পে শহীদ হয়েছেন তাঁদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
সভায় ইউপিডিএফের নেতা গিরি চাকমা বলেন, সকল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে আর্দশিক রাজনীতিতে ঠিকে থাকার নামই সংগ্রাম। পাহাড়ে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত না হলে নিপীড়িত পাহাড়ি জনগণের মুক্তি আসবে না। কাজেই জনগণকে এই লড়াইয়ে সম্পৃক্ত হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, পাহাড়ে নামে বেনামে নানান রাজনৈতিক দল-সংগঠন সৃষ্টি হয়েছে, তারা মুখে জনগণের অধিকারে কথা বলে কিন্তু বাস্তবে নিজেদের স্বার্থই তাদের কাছে প্রধান। পাহাড়ি জনগণ যদি সঠিক রাজনৈতিক দল বেছে নিতে না পারে তাহলে আমাদেরকে যুগে যুগে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হতে হবে। তিনি অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইউপিডিএফ-এর সাথে যুক্ত হয়ে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের সংগ্রামকে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান।
পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য তুলতুল চাকমা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে এখনো পাহাড়ে রাষ্টীয়ভাবে দমন পীড়ন জারি রয়েছে। শত দমন-পীড়ন সত্ত্বেও ’৮৯ সালে পিসিপি’র নেতৃত্বে ছাত্র গণজাগরণের মধ্যে দিয়ে কঠোর প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুলেছিল। বর্তমানে পাহাড়ি ছাত্র সমাজের দেশ-জাতি-সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা না থাকায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। জাতির দুর্দিনে তিনি সকলকে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পতাকা তলে সমবেত হয়ে জাতির অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনে শরীক হওয়ার আহবান জানান।
তনুময় চাকমা বলেন, একসময় পাহাড়িরা মুঘল, বৃটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে তীব্র সংগ্রাম গড়ে তুলেছিলো। সেই প্রতিরোধ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তারা তাদের স্বাতন্ত্র্যতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিলো। পাকিস্তান আমলেও তারা তাদের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছিল এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও যখন পাহাড়িদের জাতিসত্তার পরিচয় অস্বীকার করা হয় তখনও তারা সশস্ত্র সংগ্রাম গড়ে তুলেছিল। ১৯৮৩ সালের পর জনসংহতি সমিতি গভীর সংকটে পড়লে তখন ৮৯’এর পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের গঠন হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু হয় এবং পরে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবি নিয়ে যে লড়াই সংগ্রাম শুরু করা হয় তা এখনো অব্যহত রয়েছে।
পিসিপি চবি শাখার প্রতিনিধি সোহেল চাকমা বলেন, পাহাড়ে পাহাড়িদের উপর দমন পীড়নের চিত্র ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। একটি নিপীড়িত জাতির মুক্ত হওয়ার জন্য প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে সংগঠন। কারণ একটি সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক দলই পারে একটি নিপীড়িত জাতিকে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে এবং জনগণকে সুসংগঠিত করে তাদের রাজনৈতিক মুক্তি এনে দিতে। এজন্য নিপীড়িত জাতি হিসেবে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ছাত্র-যুবক তথা জুম্ম জনগণের আদর্শিক সংগঠনের কোন বিকল্প নেই।
যুব ফোরাম নেতা তুজিম চাকমা বলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রবল দমন পীড়নে বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং পাহাড়ি ছাত্র-যুবক-জনতা হাতে হাত রেখে এক সাথে এগিয়ে যেতে হবে। পিসিপি’র নেতৃত্বে পাহাড়ি জনগণের দাবি পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের সংগ্রামকে বেগবান করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
আলোচনা সভা শেষে সংক্ষিপ্ত এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।