বগাছড়িতে পাহাড়িদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার ৭ বছর আজ

0
বগাছড়ি সাম্প্রদায়িক হামলার ফাইল ফটো

রাঙামাটি ।। আজ ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ রাঙামাটির নান্যাচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের বগাছড়িতে পাহাড়িদের কয়েকটি গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলার ৭ বছর পূর্ণ হলো। বাংলাদেশ আজ বিজয়ের ৫০তম বার্ষিকী পালন করলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা, নিপীড়ন-নির্যাতন বন্ধ হয়নি। বগাছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলা ও গণহত্যার আজও কোন বিচার হয়নি।

২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশে বিজয় দিবস পালনের প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু সেদিন ভোর হতে না হতেই সেটলার বাঙালিরা বগাছড়ি, সুরিদাশ পাড়া, নবীন তালুকদার পাড়ায় হামলা চালিয়ে পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাট করে বিজয় উৎসব শুরু করে। আর এ হামলায় সেনাবাহিনী সেটলারদের সহযোগিতা প্রদান করে।

সেদিন সকাল ৭টা থেকে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় সেটলার বাঙালিরা দলবদ্ধ হয়ে পাহাড়িদের গ্রামে হামলা, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট শুরু করে। একে একে তিনটি গ্রামে পাহাড়িদের ৬০টির অধিক বাড়ি-দোকান পুড়ে ছাই করে দেয়। এছাড়া সেটলাররা স্থানীয় বৌদ্ধ বিহার জ্বালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে এবং বিহারে ঢুকে বৌদ্ধ ভিক্ষুকে মারধর, বুদ্ধ মূর্তি ভাংচুর ও লুট করে নিয়ে যায়।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, সেদিন সকালে সেটলাররা বিরোধপূর্ণ জায়গায় লাঠিসোটা হাতে জড়ো হয়ে তাদের আনারস বাগান কেটে দেওয়ার অভিযোগ করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এ খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি দলও সেখানে উপস্থিত হয়। এ অবস্থার চলার কিছুক্ষণ পর বিনা উস্কানিতে সেনা বাহিনীর সদস্যরা হঠাৎ ৩ রাউন্ড ফায়ার করে। এতে বাঙালিরা আরো বেশি উত্তেজিত হয়ে উঠে। এদিকে, গুলির শব্দ শুনে আতঙ্কগ্রস্ত পাহাড়িরা ভয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে গেলে সেনাদের উস্কানিতে বাঙালিরা দোকান ও বসত বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিতে শুরু করে।  একের পর এক যখন বাড়ি পুড়ে দেয়া হচ্ছিল তখনও সেনা দলটি ঘটনাস্থলের আশেপাশে অবস্থান করছিল। কিন্তু তারা সেটলারদের কোন বাধা দেয়নি। উপরন্তু সেটলারদের আগুন লাগিয়ে দেয়ার পালা শেষ হওয়ার পরও যেসব দোকান ও ঘর পুড়ে যায়নি সেগুলোতে সেনা সদস্যরা নিজেরাই আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে সেনাদের সাথে পাহাড়িদের বাকবিতণ্ডার ঘটনাও ঘটে।

এ হামলার পরবর্তীতে তৎকালীন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সরকারের স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কিন্তু আজ এ হামলার ৭ বছর পূর্ণ হলেও বিচার হয়নি হামলাকারীদের। তারা রয়েছে এখনো বহাল তবিয়তে। ফলে পাহাড়িরা এখনও নানা আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

অপরদিকে সেনা-প্রশাসনের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগীতায় সেটলার বাঙালিরা প্রতিনিয়ত পাহাড়িদের ভোগদখলীয় জায়গা-জমি বেদখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

শুধু বগাছড়ি হামলা নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত যত হত্যাকাণ্ড ও সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে তার কোনটিরই বিচার হয়নি। উপরন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন, ভূমি বেদখলের মাত্রা আগের চেয়েও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যায় ধরপাকড়, মিথ্যা মামলায় জেলে প্রেরণ, বিনা বিচারে হত্যা, রাত-বিরাতে ঘরবাড়িতে তল্লাশি যেন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষও এই নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More