বাঘাইছড়িতে জুম্মদের জায়গা বেদখল করে সেনা ক্যাম্প স্থাপনের পাঁয়তারার অভিযোগ

0

বাঘাইছড়ি, রাঙামাটি ।। রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নে জুম্মদের জায়গা বেদখল করে সেনা ক্যাম্প স্থাপনের পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উক্ত জমিতে ইতোমধ্যে ‘নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য নির্ধারিত স্থান’ বলে সাইন বোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সেখানে বসবাসকারী জুম্ম পরিবারগুলোকে ‘জায়গাটি ছেড়ে দিতে হবে’–এমন হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ মার্চ ২০২২ সকাল আনুমানিক ১০:৪৫ টায় লংগদু সেনা জোনের অধীন দুরছড়ি বাজার সেনা ক্যাম্পের একদল সেনা সদস্য সারোয়াতলী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের উত্তর খাগড়াছড়ি (মেদেনীপুর) গ্রামে এসে জুম্মদের জায়গা ও বসতবাড়ির পাশেই ‘উত্তর খাগড়াছড়ি আর্মি ক্যাম্প’ এর নির্ধারিত স্থান বলে সাইনবোর্ড টাঙায়। সাইনবোর্ডে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য নির্ধারিত স্থান’, ‘উত্তর খাগড়াছড়ি আর্মি ক্যাম্প’, ‘উক্ত স্থানে কোনো প্রকার মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, গির্জা, কেয়াং ঘর বা অন্য কোনো প্রকার স্থাপনা নির্মাণ করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ও দন্ডনীয় অপরাধ’ এবং ‘আদেশক্রমেঃ লংগদু জোন’।

এছাড়া সেনাব সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের হুমকি দিয়ে বলে যে, ‘যারা সেখানে বাড়ি নির্মাণ করেছে তাদেরকে জায়গাটি ছেড়ে দিতে হবে’।

যে জায়গায় সেনাবাহিনী ‘উত্তর খাগড়াছড়ি আর্মি ক্যাম্প’ বলে সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে, সেই জায়গাটি তিন জুম্ম গ্রামবাসীর নামে রেকর্ডভুক্ত রয়েছে। জায়গাটির মালিকরা হলেন- (১) চন্দ্র চাকমা, যার নামে .৫০ শতক রেকর্ডভুক্ত রয়েছে, (২) লক্ষীধন চাকমা, যার নামে ২.০০ একর রেকর্ডভুক্ত রয়েছে ও (৩) শুক্রচার্য চাকমা, যার নামে রেকর্ডভুক্ত রয়েছে .৫০ শতক।

বর্তমানে ঐ জায়গাটিতে ১৬টি জুম্ম পরিবার বসবাস করছে বলে জানা গেছে। উক্ত পরিবারগুলি হল- (১) সোনাধন চাকমা, পিতা-ধনঞ্জয় চাকমা, (২) ধর্মধন চাকমা, পিতা-তেরা চাকমা, (৩) বিমল চাকমা, পিতা-প্রভাত চন্দ্র চাকমা, (৪) মধু জীবন চাকমা, পিতা-রিজার্ব কুমার চাকমা, (৫) সুরেশ কুমার চাকমা, পিতা-মঙ্গল ধন চাকমা, (৬) চিত্তি রঞ্জন চাকমা,পিতা- মনচান চাকমা, (৭) সুমন চাকমা, পিতা-চিত্তি রঞ্জন চাকমা, (৮) জ্ঞান রঞ্জন চাকমা, পিতা-মুতু রায় চাকমা, (৯) বৃষকেতু চাকমা, পিতা-সংঘসুর চাকমা, (১০) সত্যবান চাকমা, পিতা-মঙ্গল চান চাকমা, (১১) টনু চাকমা, পিতা-ধন চাকমা, (১২) বেলটক চাকমা, পিতা-পাদল্য চাকমা, (১৩) বিনোদ বরন চাকমা, পিতা- শশী মোহন চাকমা, (১৪) চন্দ্র চাকমা, পিতা-ঐ, (১৫) রিপন চাকমা, পিতা-চন্দ্র চাকমা ও (১৬) মাতৃ চাকমা, পিতা-সমর চাকমা।

স্থানীয়রা জানান, বিগত ১৯৮৮ সালের ৮ আগস্ট সেনাবাহিনী ও বাঙালি সেটলারদের কর্তৃক সারোয়াতলী ইউনিয়নের খাগড়াছড়ি এলাকা ও দুরছড়ি বাজারে নিরীহ জুম্মদের উপর এক বর্বব হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে যা বাঘাইছড়ি বা দুরছড়ি গণহত্যা নামে পরিচিত, যেখানে অন্তত ৫৩ জন নিরীহ জুম্মকে গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়।

উক্ত হত্যাকাণ্ডের ফলে এলাকার জুম্ম জনগণ প্রাণ বাঁচাতে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গেলে, সেদিনই সেনাবাহিনী ঐ জায়গাটিতে একটি সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। তবে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর চুক্তির শর্ত মোতাবেক ক্যাম্পটি প্রত্যাহার করা হয়। এরপর ১৯৮৮ সালের হত্যাকাণ্ডে উদ্বাস্তু হওয়া কিছু জুম্ম পরিবার সেখানে আবার ঘরবাড়ি তুলে বসতিস্থাপন শুরু করে। সেনাবাহিনী ঐ জায়গাটি বেদখল ও সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করে তাদেরকে আবার নিজেদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সেখানকার অধিবাসীরা।

অপরদিকে বিজিবি কর্তৃক একই ইউনিয়নের পূর্ব হীরাচর গ্রামেও একই কায়দায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কর্তৃক রসিক চন্দ্র চকামা (পিতা নবীন চন্দ্র চাকমা) নামে এক জুম্ম গ্রামবাসীর জায়গা বেদখল করে ক্যাম্প স্থাপন করার পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, ১৯৮৮ সালের ৮ আগস্ট সংঘটিত ঐ গণহত্যার পর রসিক চন্দ্র চাকমাও উদ্বাস্তু হন এবং অন্যত্র পালিয়ে যান। এর পরপরই তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) রসিক চন্দ্র চাকমার রেকর্ডভুক্ত উক্ত ভূমি বেদখল করে ক্যাম্প স্থাপন করে। চুক্তির পর ঐ ক্যাম্পটিও প্রত্যাহার করা হলে রসিক চন্দ্র চাকমা তার জায়গাটিতে ফিরে আসেন এবং সেখানে বসতি ও ফলজ বাগান গড়ে তোলেন। গত জানুয়ারি মাসে লংগদুর ৩৭ বিজিবি রাজানগর জোনের একদল বিজিবি সদস্য এসে একই ধরনের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়ে যায় এবং জায়গার মালিককে হুমকিমূলক কথাবার্তা বলে যায়।

সূত্র: হিল ভয়েস


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More