সন্তু লারমা বনাম নতুন এম.এন.লারমা (উষাতন) : ‘আদিবাসী’ দিবস উপলক্ষে হিংসা বাড়ার সম্ভাবনা

0

সিএইচটি নিউজ ডটকম
Santu+Usatonরাঙামাটি : জেএসএস-সন্তু গ্রুপে জোরদার অন্তর যুদ্ধ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে আশুতোষ চাকমা ওরফে সুপ্রিয় বাবুকে হত্যা করা হয়েছে।

জানা গেছে, এক পক্ষে সন্তু লার্মা এবং তার জামাই প্রনতি বিকাশ চাকমা (সাধারণ সম্পাদক) এবং অন্যপক্ষে  প্রতিদ্বন্দ্বী  উষাতন তালুকদার এবং তার সমর্থক সত্যবীর দেওয়ান (ভূতপুর্ব সাধারণ সম্পাদক), মঙ্গল কুমার চাকমা (তথ্য এবং প্রচার বিভাগের প্রধান), সজীব চাকমা  (তথ্য এবং প্রচার বিভাগের উপ-প্রধান) ইত্যাদি। উষাতন গ্রুপকে সমর্থন করছে ১৯৮৩-র গৃহযুদ্ধের অন্যতম কৌশলবিদ গৌতম কুমার চাকমা। এদিকে জেএসএস-সন্তু গ্রুপের পররাষ্ট্র মন্ত্রী করুণালংকার ভিক্ষু সন্তু লার্মার বিরুদ্ধে এর আগে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে।

এম.এন.লার্মার পর উষাতন তালুকদার জেএসএস-র একমাত্র নির্বাচিত সাংসদ এবং সাংসদ হওয়ার পর দেশে বিদেশে, বিশেষভাবে “বন্ধুদের” মধ্যে উষাতন তালুকদারের এম.এন.লারমার মত স্বীকৃতি বেড়েছে এবং পাচ্ছে। Unrepresented Nations and Peoples Organisation-র জুলাই ২০১৫ সাধারণ সভায় উষাতন তালুকদার প্রেসিডেন্ট পদের প্রস্তাব এবং জাতিসংঘের Permanent Forum on Indigenous Peoples-র জুলাই ২০১৫ সভায় উষাতন তালুকদারকে বিশেষ আমন্ত্রণ সন্তু লারমাকে চরমভাবে ঈর্ষান্বিত করেছে। অন্যদিকে সন্তু লার্মা নির্বাচিত চেয়ারম্যান না হওয়ার কারণে কোনো মর্যাদা পাচ্ছে না। জেএসএস ভাগ হয়ে যাওয়ার কারণে তার মর্যাদা আরো কমে গেছে এবং তাকে জুম্ম জনগণের নেতা হিসাবে কেউ, দেশে বিদেশে এবং বিশেষভাবে “বন্ধুদের” মধ্যে, গম্ভীরভাবে (seriously ) নেয় না।

উষাতন তালুকদার এবং মঙ্গল কুমার চাকমা প্রায় সময় একসাথে বিদেশে ভ্রমন করেন এবং তাদের বন্ধুত্ব সন্তু লার্মার বড় ভয়ের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই উষাতন তালুকদারের ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ার জন্য সন্তু লারমা মঙ্গল কুমার চাকমা এবং সজীব চাকমাকে হটিয়ে নেবার উদ্যোগ নিয়েছে।  সজীব চাকমাকে হটিয়ে নগেন্দ্র চাকমাকে তথ্য এবং প্রচার বিভাগের উপ প্রধান হিসাবে আনার প্রস্তাব দিয়েছে সন্তু লারমা। এর পরে মঙ্গল কুমারকে হটানো হবে।

উষাতন তালুকদার এবং মঙ্গল কুমার চাকমা অন্যদিকে প্রনতি বিকাশ চাকমাকে হটিয়ে ভূতপূর্ব সাধারণ সম্পাদক সত্যবীর দেওয়ানকে নতুন সাধারণ সম্পাধক নিয়োগ করার প্রচারণা ভিতরে ভিতরে শুরু করে দিয়েছে। সত্যবীর দেওয়ান ভূতপূর্ব সাধারণ সম্পাদক এবং তিন বছর জেলে থাকার সময় আর্মিদের হাতে যাতনার শিকার হয় এবং সেজন্য তার সমর্থন বেড়ে যায়। সত্যবীর দেওয়ান জেলে থাকার সময়, প্রনতি বিকাশ চাকমাকে সন্তু লার্মা বেআইনীভাবে নিযুক্ত করেন এবং সাধারণ সম্পাদকের পদ সত্যবীর দেওয়ানকে ফিরিয়ে দেননি। কিন্তু ইতিমধ্যে জেলে থাকার কারণে সত্যবীর দেওয়ানের অনেক সমর্থন বেড়ে গেছে এবং কর্মী মহলে সন্তু লার্মা এবং তার জামাই প্রনতি বিকাশের বিরুদ্ধে অনেক ক্ষোভ বেড়েছে। কর্মী মহলের ক্ষোভের কারণ হচ্ছে  সন্তু লার্মা নিজে জেল থেকে ফিরে আসার পর ফিল্ড কমান্ডার পদ ফিরে পাওয়ার জন্য ১৯৮৩ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু করেন, অথচ এখানে সে নিজের জামাইকে সাধারণ সম্পাদক পদে বসিয়েছেন এবং তিন বছর পরও সত্যবীর দেওয়ানকে সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ করার কোন নাম নেই।

অবিভক্ত জেএসএস-র অনেক নেতা নিজেদের বউ এবং মেয়েদের সন্তু লার্মা থেকে সরিয়েছেন। সন্তু লার্মা অনেক নেতার বউ এবং মেয়েদের শালিনাতাহানির টার্গেট বানিয়েছিলেন। এসব নেতা এখন সন্তু লার্মার বিরুদ্ধে এবং সন্তু লার্মাকে এর মাশুল দিতে হচ্ছে।

বর্তমানে জেএসএস-সন্তু গ্রুপে উষাতন তালুকদারের সন্তু লার্মার চেয়ে বেশি সমর্থন রয়েছে। সশস্ত্র দলগুলো সন্তু লার্মাকে সমর্থন করছে না কারণ যেসব টাকা ওরা তুলছে সেগুলো সন্তু লার্মার ভাইপো ফিল্ড কমান্ডার লক্ষী প্রসাদের কাছে মিজোরামে চলে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে লক্ষী প্রসাদ যে আর দেশে ফিরে আসবে না সেটা জানা গেছে এবং কর্মী মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। আশুতোষ চাকমাকে সেজন্য হত্যা করা হয় এবং আশুতোষ চাকমার একটি শক্তিশালী গ্রুপের সমর্থন ছিল বলে জানা গেছে। সন্তু লারমা ৯ অগাস্ট ‘আদিবাসী দিবস’ পালন করতে ঢাকায় গেলে, আশুতোষ চাকমার সমর্থক দল আক্রমণ করতে পারে এমন আভাসও পাওয়া গেছে।

কর্মী মহলের দাবি- সন্তু লারমা পার্টির সভাপতি পদ ছেড়ে রিজিওনাল কাউন্সিল এবং চুক্তি বাস্তবায়নের উপর মনোযোগ দিক এবং তার পরিবর্তে উষাতন তালুকদারকে জেএসএস-সন্তু গ্রুপের সভাপতি করা হোক। তাছাড়া সন্তু লারমার জামাই ভিক্টর-কে বহিস্কার করে সত্যবীর দেওয়ানকে সাধারণ সম্পাদকের পদ ফিরিয়ে দেয়া হোক।

যদি এসব প্রস্তাব গ্রহন করা না হয় তাহলে সন্তু গ্রুপ থেকে জামাই-শ্বশুরকে বহিস্কার করা হবে অথবা সন্তু গ্রুপ আবার ভেঙ্গে যেতে পারে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
———————

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More