সিএইচটি নিউজে খবর প্রকাশের পর সন্তু গ্রুপে ঝড়
সিএইচটিনিউজ.কম
করুণালংকার ভিক্ষু সন্তু লারমার হয়ে অস্ত্র সংগ্রহের সংবাদ গতকাল সিএইচটি নিউজ ডটকমে প্রকাশিত হওয়ার পর সন্তু গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার ঝড় উঠেছে।
তারা খবর ফাঁস হওয়ার জন্য একে অপরকে দোষ দিচ্ছে এবং একে অপরের বিরুদ্ধে হুমকি দিচ্ছে।
অপরদিকে সন্তু লারমা তার ঘনিষ্ট সহযোগী উষাতন তালুকদার, মঙ্গল কুমার চাকমা ও অপর কয়েক জনকে নিয়ে বৈঠক করেন। সন্তু লারমা চাইছেন বিদেশ প্রতিনিধি হিসেবে করুণালংকার ভিক্ষুর পরিবর্তে অন্য একজনকে নিয়োগ দিতে। এ লক্ষ্যে তিনি বেশ আগে থেকে কাজ শুরু করেন পররাষ্ট্র বিভাগ সম্পর্কিত সেলে তুহিন চাকমাকে নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে।
অপরদিকে করুণালংকার ভিক্ষু সন্তু লারমার এই পদক্ষেপের দৃঢ় বিরোধীতা করে আসছেন। তিনি তার সমর্থকদেরকে ফোনে বলেন, সন্তু লারমার চাইতে আমিও কম পাপ করি নাই। প্রয়োজনে দেখে নেওয়া হবে।
তবে নির্ভরযোগ্য সূ্ত্রে জানা যায়, করুণালংকার ভিক্ষু বিভিন্ন মহল থেকে বিরোধীতার সম্মুখীন হচ্ছেন। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস যাওয়ার আগে করুণালংকার ভিক্ষুর সাথে ছিলেন এমন অনেক জুম্ম এই প্রতিনিধিকে বলেন, তিনি তাদেরকে দাসের মতো ব্যবহার করতেন এবং বড়ুয়া মেয়েদের দিয়ে নিজের শরীর ম্যাসেজ করাতেন।
ফ্রান্সে বসবাসরত এই জুম্মরা আরো বলেন, করুণালংকার ভিক্ষু ফোনে হুমকি দিয়ে এখনো তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেন। তারা এও বলেন যে, করুণালংকার ভিক্ষু নিজের ক্ষমতা জাহির করার জন্য সন্তু লারমার স্ত্রীকেও দিল্লীতে সামনা সামনি গালমন্দ করতেন এবং সন্তু লারমার পরিবারকে “খারাপ’ ও “নৈতিকভাবে অধঃপতিত” বলে মন্তব্য করতেন।
সন্তু গ্রুপের স্থানীয় কমান্ডাররাও করুণালংকার ভিক্ষুর বিরোধীতা করে থাকেন। ভারতের ত্রিপুরায় বসবাসরত ইন্দু চাকমা তার উপর ক্ষুদ্ধ।
গত বছর (২০১৪) ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় রয়েল গেস্ট হাউজে মদ খেয়ে মাতলামী করার কারণে করুণালংকার ভিক্ষুর ব্যাপারে তিনি তীব্র অসন্তোষ ব্যক্ত করেন। মাতাল হওয়ার পর করুণালংকার ভিক্ষু যে নাচ দেন তাকে “তান্ডব’’ ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না বলে তিনি মন্তব্য করেন। ইন্দু চাকমা বলেন, “একমাত্র পেটের দায়ে এবং ভাষাগত সমস্যার কারনে আমাকে এইসব বদমাশদের সাথে থাকতে হচ্ছে।”
ইন্দু চাকমার এই অসন্তোষের কারনে করুণালংকার ভিক্ষু চলতি বছর মে মাসে ত্রিপুরা সফরের সময় রয়েল গেস্ট হাউজে অবস্থান করলেও মদ পান করেননি। তবে ফিরে যাওয়ার সময় গোহাটিতে তিনি মদ খেয়ে আবার মাতাল হন বলে সূত্রে প্রকাশ। সন্তু গ্রুপের এই সূত্র মতে করুণা ভিক্ষুর তার ব্যাটারীগুলো রিচার্জ করা দরকার।
তবে করুণালংকার ভিক্ষুর প্রতি ফিল্ড কমান্ডার লক্ষ্মী প্রসাদ চাকমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তারা দু’জনে সন্তু লারমাকে বাদ দিয়ে কি করা যায় সে নিয়ে গোপন পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে। লক্ষ্মী প্রসাদ চাকমা ওরফে দেবাশীষ বাবু মনে করেন তিনি করুণালংকারকে দিয়ে পররাষ্ট্র বিষয়টি ম্যানেজ করতে পারবেন, কারণ করুণালংকার ভিক্ষুর ভারতে ব্যাপক কানেকশন রয়েছে। অপরদিকে করুণালংকার ভিক্ষু তুহিন চাকমাকে পররাষ্ট্র বিভাগে নিয়োগ দেয়ায় ক্ষুদ্ধ। তিনি সন্তু লারমার অস্ত্র সংগ্রাহক জিত চাকমাসহ বেশ কয়েকজনের কাছে মন্তব্য করে বলেন, ‘‘আমি এই শুয়োরের বাচ্চাকে (তুহিন)ও তার বসকে (সন্তু লারমা)সময় মত দেখে নেবো।”
লক্ষ্মী প্রসাদ চাকমাও তুহিন চাকমার নিয়োগ নিয়ে অসন্তুষ্ট। তিনি চান তার ছেলে পার্থ চাকমাকে ফরেন এফেয়ার্স বিভাগের ডেপুটি হিসাবে নিয়োগ দেয়া হোক। এজন্য তিনি এ ব্যাপারে তাকে সহযোগিতা না করে সন্তু লারমাকে দাসের মতো অনুসরণ করার কারণে প্রভাত চাকমাকেও (১৯৭৫ সালে সন্তু লারমার সাথে আটক হন)কড়া সমালোচনা করে থাকেন।
পড়ুন: সন্তু গ্রুপের অস্ত্র সংগ্রহে প্রধান ভরসা করুণালংকার ভিক্ষু
———————————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।