[ইমতিয়াজ মাহমুদের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু এখানে প্রকাশ করা হলো–সম্পাদক মণ্ডলী]
লঙ্গদুতে আগুন জ্বলছে। রাঙ্গামাটি জেলার লঙ্গদু উপজেলায় আদিবাসীদের শত শত ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে সেটেলার বাঙালীরা। কুলীন মিত্র চাকমা লঙ্গদুর তিনটিলা মৌজার হেডম্যান আর সে আবার সদর ইউনিয়ন পরিষদেরও চেয়ারম্যানও। ওর বাড়ীতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে, হেডম্যানের অফিস, ইউনিয়ন পরিষদের মাল্টিপারপাস কমিউনিটি সেন্টারেও আগুন জ্বলছে। কুলীন কোথায় আছে কেমন আছে খবর পাইনি। পুড়ছে আদিবাসীদের ঘরবাড়ি। প্রচণ্ড আতঙ্কে প্রাণ হাতের মুঠোয় নিয়ে ছুটছে আদিবাসী নারী পুরুষ শিশু।
আপনারা সমতলে যারা আছেন, মেহেরবানী করে একটা কিছু করুন। মানুষ মানুষ মরবে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমির সবচেয়ে সবুজ সবচেয়ে সুন্দর অংশে- আমাদের পাহাড়ে। এইটা কিরকম কথা ভাই। আমাদের এই পতাকার বৃত্তটিকে লাল করার জন্যে যথেষ্ট রক্ত কি আমরা দিইনি? আদিবাসীদের রক্তে সেটাকে আরও লাল করতে হবে? আপনারা যারা কথা বলতে পারেন, মেহেরবানী করে একটা কিছু করেন, একটা কিছু বলেন। এবং তাড়াতাড়ি বলেন। জুমার নামাজের আগেই বলেন। ঘটনা আরও খারাপ দিকে মোড় নিতে পারে। প্লিজ। থামান।
এইমাত্র কথা হয়েছে রাঙ্গামাটির এমপি ফিরোজা চিনুর সঙ্গে। তিনিও নিশ্চিত করেছেন যে হ্যাঁ, রাঙ্গামাটির লঙ্গদুতে আগুন দেওয়া হয়েছে আদিবাসীদের বাড়ীতে। তিনি আমার বন্ধু, আমরা একসাথে রাঙ্গামাটি কলেজে পড়েছি। তিনি আমাকে কথা দিয়েছেন, তিনি শান্তির পক্ষে থাকবেন। আদিবাসী হোক বা বানাগালি হোক, কোন মানুষের উপরই যাতে কোন অত্যাচার না হয় সেটা তিনি নিশ্চিত করার চেষ্টা করবেন। চিনু, বন্ধু, তোমার উপর ভরসা করছি। প্লিজ। মানুষের যেন কোন ক্ষতি না হয়। তোমার অনেক ক্ষমতা। বাঁচাও।
আমার বন্ধু কেরল চাকমার সাথে কথা হয়েছে। রাঙ্গামাটিতেও নাকি মিছিল করছে সেটেলাররা। ভয় পাচ্ছে আদিবাসীরা। জুমার নামাজের পর কি হয় কে জানে? ভয় আমিও পাচ্ছি। রাঙ্গামাটিতে এবং সমতলে যারাই আছেন, সুস্থ্য মাথার মানুষ যারা আছেন, মেহেরবানী করে একটা কিছু করেন, মুখ খোলেন। সকলে মিলে আওয়াজ দিলে তস্কররা ভয় পাবে। নাইলে খারাপ একটা কিছু ঘটে যাবে।
ঘটনা শুরু হয়েছে গতকাল বিকাল থেকেই। দীঘিনালার চারমাইল নামক একটা জায়গায় নুরুল ইসলাম নয়ন নামে একজনের লাশ পাওয়া গেছে। নুরুল ইসলাম নয়ন ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালাতো। সমতলের বন্ধুরা হয়তো নাও বুঝতে পারেন, পাহাড়ে লোকজন মোটর সাইকেলে যাত্রী পরিবহন করে। নুরুল ইসলামের বাড়ী লঙ্গদুতে। গতকাল বিকেলে যখন লঙ্গদুতে নুরুল ইসলামের লাশ নিয়ে এসেছে তখন থেকেই সেখানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। সেটেলারদের মধ্যে উত্তেজনা। আদিবাসীরা গতকাল সন্ধ্যা থেকেই আশঙ্কা করছিল একটা বিপদ হতে পারে। ঠিক তাই হয়েছে।
আশঙ্কা করছিলাম যে জুমার নামাজের পর ওরা হামলা করবে। এর মধ্যে হয়তো প্রশাসন থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হয়নি। আশঙ্কার চেয়েও পরিস্থিতি ভয়াবহ। সকালেই হামলা শুরু হয়েছে। সকালেই খবর পেলাম আগুন দেওয়া শুরু হয়েছে আদিবাসীদের বাড়ীতে। জ্বলছে। ঢাকায় থেকে পড়াশুনা করে এরকম একটা মেয়ে সকাল থেকেই কাঁদছে, দিশেহারা। ওর বন্ধু আমাকে ইনবক্স করে জানিয়েছে মেয়েটির বাবা মা কারো সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ওদের বাড়িঘর পুড়ে গেছে। রেজাউল করিম সুমন ইনবক্স করে জানিয়েছে ওরও একজনের সাথে কথা হয়েছে যার বাড়িঘর পুড়ে গেছে, বাবা মাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
আমি কাউকে দোষ দিচ্ছিনা। কে নুরুল ইসলামকে মেরেছে জানিনা। নুরুল ইসলাম যুব লীগের কর্মী কি যুব শিবিরের কর্মী সেও আমি জানিনা। কিন্তু রাঙ্গামাটির সকলের কাছে হাত জোর করে মিনতি করছি- মেহেরবানী করে নিরীহ আদিবাসীদের উপর হামলা করবেন না। মেহেরবানী করে থামুন। এই কলঙ্কের ভার আর বাড়াবেন না। ভালো লাগে না। মাথা নিচু হয়ে যায়। লজ্জা পাই। গ্লানিতে কান্না আসে। প্লিজ, থামান, থামান এই নৃশংসতা।
আপনাদের কাছে হাত পাতছি- প্লিজ, জুমার নামাজের আগেই ব্যাবস্থা নিন। লঙ্গদুতে এবং রাঙ্গামাটিতে। প্লিজ। মানুষ বাঁচান। মানুষ বাঁচান। আদিবাসীরাও মানুষ।
—————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।