ইউপিডিএফ নেতৃবৃন্দের সিলেট-মৌলভীবাজার সফর
নিজস্ব প্রতিবেদক
সিএইচটিনিউজ.কম
পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সিলেট ও মৌলভীবাজারের জাতিসত্তা অধ্যুষিত এলাকায় ১৯-২৩ জুলাই ৫ দিনব্যাপী সফর সমাপ্ত করেছেন। প্রতিনিধিদলে ছিলেন ইউপিডিএফভুক্ত গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি নতুন কুমার চাকমা এবং ইউপিডিএফ সংগঠক মিঠুন চাকমা। সফর কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করেন জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের নেতা ভীমপল সিনহা। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত ভিন্ন ভাষাভাষী জাতিসত্তাসমূহের রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের সংগঠন জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের প্রতিনিধি হিসেবে ইউপিডিএফ নেত্রবৃন্দ এ সফর পরিচালনা করেন। ইউপিডিএফ জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের একটি শরীক সংগঠন হিসেবে কাজ করছে।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের প্রায় ৪৫ টির মত ভিন্ন ভাষাভাষী জাতিসত্তাকে “জাতীয়তা হিসেবে বাঙালী” বানানোর প্রতিবাদে জনমত গঠন ও আন্দোলন সংগঠিত করতে নেতৃবৃন্দ এ সফর পরিচালনা করেন।
খাসী জাতিসত্তার প্রতিনিধির সাথে মতবিনিময় সভা
ইউপিডিএফ নেতৃবৃন্দ ১৯ জুলাই খাসী জাতিসত্তার নেতা মি. জিডিসন প্রধানের সাথে জাতিসত্তার অধিকার নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন। জিডিসন প্রধান ইউপিডিএফ-এর পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানান এবং দেশের জাতিসত্তাসমূহের সার্বিক মুক্তির জন্য জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের মত ঐক্যবদ্ধ সংগঠন প্রয়োজন বলে মত দেন।
কমলগঞ্জ বিষ্ণু প্রিয়া নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময়
২০ জুলাই কমলগঞ্জ উপজেলার রানীর বাজারে নবারুণ সংঘ মিলনায়তন কক্ষে বিকালে মনিপুরী জাতিসত্তার বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মনিপুরী সমাজ কল্যান সমিতি-র সহ সভাপতি সমরজিৎ সিংহ, বাংলাদেশ মনিপুরী যুব কল্যান সমিতি-র কেন্দ্রীয় সভাপতি নিখিল কুমার সিংহ, সহ সম্পাদক মৃনাল কান্তি সিংহ; বাংলাদেশ মনিপুরী ছাত্র পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক সুব্রত সিংহ প্রমুখ। উক্ত সভায় নেতৃবৃন্দ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের অন্যান্য জাতিসমূহকে “বাঙালী” জাতির অন্তর্ভূক্ত করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং পঞ্চদশ সংশোধন বাতিল করে জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ বলেন, সমাজকল্যাণমূলক সংগঠন দিয়ে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করা গেলেও বৃহত্তর পর্যায়ে অধিকার পেতে হলে রাজনৈতিক প্লাটফরম গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ সে কাজ করবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন্
চা জনগোষ্ঠী নেতৃবৃন্দের সাথে সভা
নেতৃবৃন্দ ২১ জুলাই বিকালে শ্রীমঙ্গলের লেবার হাউস সম্মেলন কক্ষে চা জনগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভা করেন। সভায় চা জনগোষ্ঠী আদিবাসী ফ্রন্ট-এর নেতা পরিমল সিং বারাইক, চা জনগোষ্ঠী নাগরিক ফোরামের নেতা শিব শংকর তাঁতি, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফোরামের আহ্বায়ক বিজয় বুনার্জি, সাধারণ সম্পাদক সীতারাম অলমিক সহ বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের প্রায় ১৬৩ টি চা বাগানের চা শ্রমিকদের দুরাবস্থার কথা সফরকারী প্রতিনিধিগণের কাছে তুলে ধরেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশের চা শ্রমিকদের ভূমি অধিকার নেই। শ্রমিকদের প্রতিদিনের মজুরি মাত্র ৫৫ টাকা যা দিয়ে একটি পরিবারের সংসার চালানো অসম্ভব। চা শ্রমিকরা শিক্ষার অধিকার থেকেও বঞ্চিত। প্রতিটি দল সরকারে যেতে তাদের ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করে কিন্তু অধিকার প্রদান করে না বলে তারা আক্ষেপ করেন। নেতৃবৃন্দ আগামীতে জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের যে কোন আন্দোলনকে সমর্থন জানাবেন বলে ঘোষণা দেন।
বাংলাদেশের প্রায় ৬ ল চা জনগোষ্ঠীর ন্যায্য অধিকার আদায়ের প্রতি সফর প্রতিনিধিদল সংহতি প্রকাশ করেন এবং চা জনগোষ্ঠীর ভূমি-শিক্ষার অধিকার যৌক্তিক বলে মত দিয়ে অবিলম্বে চা জনগোষ্ঠীর দাবি দাওয়া মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানান।
সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে মতবিনিময় সভা
২৩ জুলাই বিকালে নেতৃবৃন্দ সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সম্মেলন কক্ষে সিলেট শহরের বিষ্ণু প্রিয়া মনিপুরী ও গারো নেতৃবৃন্দের সাথে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। নেতৃবৃন্দ পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্তাসমূহের স্বায়ত্তশাসনের সংগ্রামকে যৌক্তিক বলে মত দেন। এছাড়া নেতৃবৃন্দ পার্বত্য দুই সংগঠন ইউপিডিএফ ও জেএসএস এর মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত বন্ধ করার জন্য উভয় পার্টিকে আহ্বান জানান। নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসমূহের অধিকার আদায়ের জন্য জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ গঠনকে তাৎপর্যপূর্ণ আখ্যা দিয়ে এই সংগঠনকে আরো সুসংগঠিত ও সক্রিয় করার উপর জোর দেবার জন্য সফরকারী নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানান।
উক্ত সভায় সিলেট জেলা মনিপুরী সমাজকল্যান সমিতি-র সভাপতি নির্মল সিংহ ও সাধারণ সম্পাদক সংগ্রাম সিংহ, মনিপুরী “ইথাক” পত্রিকার প্রধান ফটোগ্রাফার রঞ্জিত কুমার সিংহ, বিশিষ্ট ঠিকাদার স্বপন কুমার সিংহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বৃহত্তর সিলেটের গারো জাতিসত্তার পক্ষে ছাত্র নেতা মাইকেল দান্দালিও সভায় উপস্থিত ছিলেন।