চিম্বুকে হোটেল নির্মাণ বন্ধের দাবিতে পার্বত্য মন্ত্রী ও সেনা প্রধানকে ৫৯ বিশিষ্ট নাগরিকের চিঠি
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা ।। বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে ম্রো ভূমিতে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সেনাবাহিনী প্রধানকে চিঠি দিয়েছেন ৫৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক। একই চিঠি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিবকেও পাঠানো হয়েছে। এছাড়া এ প্রকল্পে সব ধরনের সম্পৃক্ততা প্রত্যাহার করতে আন্তর্জাতিক হোটেল চেইন ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল বরাবরও চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১) নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের পক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চিম্বুকের ওই জনপদে অন্তত ১০ হাজার ম্রো জনগোষ্ঠীর বসবাস। উদ্যোক্তারা এটিকে ‘ম্যারিয়ট হোটেলস অ্যান্ড রিসোর্টস’ বলে বিজ্ঞাপন বোর্ডে প্রচার করলেও গত ১৯ জানুয়ারি ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনালের ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ প্রকল্পে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি চূড়ান্ত নয় এবং তাদের নাম ও ব্র্যান্ডের ব্যবহার অনুমোদিত নয় বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন।
চিঠিতে বিশিষ্ট নাগরিকরা হোটেল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সিকদার গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অংশীদারত্ব বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ও পলাতক ব্যক্তিদের মালিকানাধীন সিকদার গ্রুপের সঙ্গে সেনাবাহিনীর অংশীদারত্ব চরম হতাশাজনক।
নাগরিকদের পাঠানো চিঠিতে অভিযোগ করে বলা হয়, ‘প্রতিবাদকারী ম্রো জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এবং সাজানো কিছু অনুষ্ঠান-বক্তব্য-লেখার মাধ্যমে হোটেল ও বিনোদন পার্ক স্থাপনে ম্রো জনগোষ্ঠীর সম্মতি আছে বলে অপচেষ্টা করা হচ্ছে। ম্রো জনগোষ্ঠীর জীবিকা অর্জনে, তাদের চলাচল ও যাতায়াতেও বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে। হোটেলের প্রয়োজনে ২০ একর জমি নেওয়ার কথা বলা হলেও মূলত বিস্তৃত এলাকা ঘিরে সীমানাখুঁটি স্থাপনের কাজ করা হচ্ছে।’
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা প্রথাগত জনগোষ্ঠীর অধিকার, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি পূর্ণ সম্মান জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এ বিষয়ে মতবিনিময়ের জন্য মন্ত্রী, সেনাবাহিনী প্রধান ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে দেখা করার অনুরোধও জানিয়েছেন স্বাক্ষরকারীরা।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নারী অধিকার কর্মী ড. হামিদা হোসেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক এম এম আকাশ, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আইনজীবী সারা হোসেন, সঞ্জীব দ্রং, জুয়ামলিয়ান আমলাই প্রমুখ।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।