মুক্তমত

দেশে ধর্ষণ মহামারি, মন্ত্রীদের বচন ও জনগণের করণীয় নিয়ে দু’ চার কথা

0

।। পারদর্শি ।।

প্রতীকী ছবি। সংগৃহিত

দেশে চলছে ধর্ষণের মহামারি। যা চলমার করোনা ভাইরাস মহামারির চেয়েও যেন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন কত যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে তার কোন হিসেবে নেই। মিডিয়ায় যৎসামান্য ঘটনা প্রকাশিত হয়ে থাকে। তাও অনেকটা রয়েশয়ে প্রকাশ করা হয়।

যেমন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ঘটে যাওয়া বিবস্ত্র করে নারীকে নির্যাতনের ঘটনাটি ৩২ দিন পর্যন্ত কোন মিডিয়াই প্রকাশিত হয়নি। ভাগ্যিস! দুর্বৃত্তরা ওই নারীকে হেয় করার আশায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনার ভিডিওটি ভাইরাল করেছিল। নাহলে এ ঘটনাটি কোনদিনই মিডিয়ায় আসতো কিনা সন্দেহ। এভাবে আরো কত ঘটনা যে অপ্রকাশিত থাকছে তা কারোর জানা নেই।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা দেশবাসীকে সবচেয়ে বেশি বিক্ষুব্ধ ও আতঙ্কিত করে তুলেছে। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এক পহাড়ি নারীকে হাত-পা বেঁধে ৯ জন সেটলার দুর্বৃত্ত মিলে ২ ঘন্টার অধিক পালাক্রমে ধর্ষণ, সিলেটের এমসি কলেজে বেড়াতে যাওয়া এক নারীকে ৯ ছাত্রলীগ কর্মীর গণধর্ষণ এবং সর্বশেষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়ায় প্রকাশিত নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করে মধ্যযুগীয় কায়দায় শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা অন্যতম।

জনগণের বিক্ষোভ-প্রতিবাদের কারণে এসব ঘটনায় জড়িত কিছু অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বটে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ এ যাবত এমন বহু ঘটনার কোন বিচার হয়নি, অপরাধীরা পার পেয়ে আবারো একই ঘটনা ঘটানোর নজির ভূরিভুরি রয়েছে।

এদিকে ধর্ষণ ঘটনা নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা নানা কথা বলে ধর্ষণকারীদের পক্ষে সাফাই গেয়ে যাচ্ছেন। কেউ যুক্তি দিয়ে বলছেন ধর্ষণ শুধু আমাদের দেশে নয়, অন্য দেশেও হয়। কেউ বলছেন ধর্ষণের ঘটনা ষড়যন্ত্র। কেউ বলছেন ধর্ষণের নিয়ে রাজনীতি করা যাবে না। আবার কেউ বলছেন বিএনপি দলীয়ভাবে ধর্ষণকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে… ইত্যাদি।

এখন দেখা যাক কয়েকজন মন্ত্রীর বচন (পত্রিকায় প্রকাশিত হেডলাইন)-

  • বিশ্বের দিকে তাকিয়ে দেখেন ধর্ষণ কোন জায়গাই নাই- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী (যুগান্তর, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০)
  • নোয়াখালী নারী নির্যাতনের ঘটনা ষড়যন্ত্র হতে পারে- আইনমন্ত্রী (জাগো নিউজ, ৫ অক্টোবর ২০২০)
  • বিএনপি তো দলীয়ভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে নারী ধর্ষণ করেছে- তথ্য মন্ত্রী (দেশ রূপান্তর, ৫ অক্টোবর ২০২০)
  • ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়- ওবায়দুল কাদের (আমাদের সময়, ৫ অক্টোবর ২০২০)।

সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের এমন কথাবার্তা ধর্ষকদের রক্ষা বা ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার একটা তৎপরতা বলেই প্রতীয়মান হয়।

শুধু এসব কথাবার্তায় নয়, কাজে কর্মেও তা প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন- আজ ঢাকায় ধর্ষণবিরোধী মিছিলে পুলিশ লাঠিপেটা করেছে। এতে কয়েকজন মিছিলকারী আহত হয়েছেন। অন্যদিকে সকালে তিতুমীর কলেজে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ধর্ষণ বিরোধী মানববন্ধন করতে চাইলে ছাত্রলীগের কর্মীরা বাধা দিয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানা গেছে। এসকল কর্মকাণ্ড থেকে এটা খুবই স্পষ্ট যে, সরকার এবং তার বাহিনীগুলোই হচ্ছে ধর্ষক-খুনিদের রক্ষক। সেজন্য দেশে বন্ধ হচ্ছে না ধর্ষণ-নিপীড়নের মতো ঘটনাগুলো।

আর দেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে কী বলবো। এই নিয়ন্ত্রিত বিচার ব্যবস্থা থেকে ধর্ষক-নিপীড়কদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আশা করা যায় না। যদি বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন হতো তাহলে পাহাড়ের নারী নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণের বিচার হতো, কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু ধর্ষণ-হত্যার বিচার হতো। কিন্তু রাষ্ট্রীয় বিচার ব্যবস্থা এ সব ঘটনার বিচার করেনি। যার ফলে দেশটা এখন ধর্ষকদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।

তাহলে এখন জনগণের করণীয় কী? আমার মতে একটাই করণীয়। সেটা হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নামা। যারা ধর্ষক-নিপীড়কদের রক্ষা করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।

[মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখাগুলো লেখকের নিজস্ব মতামতই প্রতিফলিত]

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More