লোগাং গণহত্যার শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবিতে পানছড়িতে তিন সংগঠনের বিক্ষোভ

0
লোগাং গণহত্যাসহ সকল হত্যাকাণ্ডের শ্বেতপত্র প্রকাশ ও খুনিদের বিচারের দাবিতে তিন সংগঠনের বিক্ষোভ মিছিল।

পানছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০২৪

লোগাং গণহত্যাসহ সকল হত্যাকাণ্ডের শ্বেতপত্র প্রকাশ ও খুনিদের বিচারের দাবিতে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ।

লোগাং গণহত্যার ৩২তম বার্ষিকীতে আজ ১০ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার সকাল ১০টায় এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় নীক্সায় প্রণীত সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ কর” শ্লোগানে লোগাং আমতলি থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে ’৯২-এ সংঘটিত গণহত্যার ঘটনাস্থলের সামনে (বর্তমান লোগাং বাজার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও লোগাং ইউনিয়ন ইউপি কার্যালয়) এসে প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।


সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সদস্য মানিক পুদি চাকমার সভাপতিত্বে ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পানছড়ি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক পরান্টু চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ’র পানছড়ি ইউনিটের সংগঠক বকুল চাকমা, পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান শান্তি জীবন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বরুন চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পানছড়ি উপজেলা দপ্তর সম্পাদক দেবাশীষ চাকমা।

ইউপিডিএফ সংগঠক বকুল চাকমা বলেন, ১৯৯২ সালে সংঘটিত লোগাং গণহত্যা জুম্ম ধ্বংসের একটি নীলনক্সা। দীর্ঘ ৩২ বছরেও এ ঘটনার বিচার না হওয়ার মাধ্যমে তা আজ প্রমাণিত।

তিনি আরো বাংলাদেশ স্বাধীনতার এত বছরেও আমরা জুম্মরা নিরাপদ নয়। বিশেষ করে এই সময়ে (বৈ-সা-বি) সবসময় চিন্তা থাকে কোন কিছু হয় কিনা, কোন হত্যাকাণ্ড হয় কিনা। কারণ প্রশাসন আমাদের জুম্মদের নিরাপত্তা দিতে পারে না।

তিনি বান্দরবানের কথা উল্লেখ করে বলেন, বম জাতিসত্তার জনগণকে যেভাবে অন্যায়ভাবে গণগ্রেফতার করা হচ্ছে তা খুবই উদ্বেগের বিষয়। এটি একটি রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র।

তিনি রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

 বিক্ষোভ সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের হাতে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যাচ্ছে। 

 পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান শান্তি জীবন চাকমা বলেন, লোগাং এলাকায় আমরা জ্বালাও পোড়াও এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছি। লোগাং গণহত্যা কতটা লোমহর্ষক হয়েছে তা আমরা জানি। শুধু লোগাং নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন জায়গায় লোগাং গণহত্যার মতো আরো অনেক ঘটনা ঘটেছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা নিরাপত্তা নিয়ে পাহাড়ে বসবাস করতে চাই। পার্বত্য চট্টগ্রামে আর যেন কোন ঘটনা সংঘটিত না হয় সরকারের কাছে আহ্বান জানাই।

তিনি সবাইকে বৈসাবি’র শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আমরা বৈসাবিতে যেন আনন্দের নামে অপসংস্কৃতি লালন না করি। তিনি নিজের সংস্কৃতিকে লালন করে জাতীয় ঐতিহ্যকে রক্ষা করার আহ্বান জানান।

যুব নেতা বরুন চাকমা বলেন, আজ আমরা যে জায়গায় দাঁড়িয়ে সমাবেশ করছি আজ হতে ৩২ বছর আগে এই দিনে এখানেই সংঘটিত হয়েছিল বর্বরোচিত লোগাং গণহত্যা। এখানে অনেক পাহাড়িকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই স্কুলের মাঠে লাশ কুড়িয়ে রেখেছিল এবং অনেক লাশ লোগাং নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়ে বলে জানা যায়। সেসময় আমাদের জুম্মদেরদের পরিকল্পিতভাবে এখানে এনে গুচ্ছগ্রামে সেনা নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছিল। বর্তমানে এখানে সেটলার বাঙালিরা বসবাস করছে।

তিনি আরো বলেন, আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও নিরাপদ নয়। সরকার ও সেনাবাহিনীর পক্ষপাতমুলক আচরণের কারণে আজ আমরা বৈষম্য ও নিপীড়েনের শিকার হচ্ছি।

তিনি লোগাং গণহত্যাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সকল গণহত্যার শ্বেতপত্র প্রকাশ করে বিভিন্ন গণহত্যায় জড়িত নিরাপত্তা বাহিনী ও দোষীদের বিচারের দাবি জানান।

নার‌্য নেত্রী মানিকপুদি চাকমা বলেন, ১৯৯২ সালে লোগাং এলাকায় সেটলার কম ছিল। সে অবস্থায় যদি তারা গণহত্যার মতো ঘটনা করতে পারে, এখনতো তারা সংখ্যায় আরো বেশি হয়েছে। এখন যে আরো কোন ঘটনা ঘটাবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই।

তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন সংগঠিত করার আহ্বান জানান।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More