৩৬ ঘন্টার সড়ক ও নৌপথ অবরোধ শান্তিপূর্ণভাবে পালিত, খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবাঞ্চিত ঘোষণা
খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবাঞ্চিত ঘোষণার মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ডাকা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায় লাগাতার ৩৬ ঘণ্টার সড়ক ও নৌপথ অবরোধ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। অবরোধ কর্মসূচি শেষে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি নতুন কুমার চাকমা পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীর কোন শুনানী, রায় এবং কোন কার্যক্রম পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশনের এক তরফা শুনানী বাতিল ও পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতির দাবিতে গত ২৩ মে সকাল ৬টা থেকে লাগাতার ৩৬ ঘন্টার সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় এ অবরোধ কর্মসূচি শেষ হয়। অবরোধ চলাকালে বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে গতকাল রাতে গচ্ছাবিল এলাকা থেকে কুনেন্দু চাকমা নামে এক ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করেছেবলে জানা গেছে।
অবরোধ চলাকালীন সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধের সমর্থনে পিকেটিং করে।সড়ক অবরোধের কারণে খাগড়াছড়ি জেলা শহরে কিছু রিক্সা, টমটম(ব্যাটারি চালিত রিক্সা) ও ব্যক্তিগত মোটর সাইকেল চলাচল করলেও দূর পাল্লার কোন যান চলাচল করেনি।জেলার উপজেলাগুলোতেও দুরপাল্লা ও আভ্যন্তরীন সড়কে কোন যানবাহন চলাচল করেনি।
অন্যদিকে অবরোধ চলাকালে রাঙ্গামাটি শহরে হালকা অটোরিক্সা চলাচল করলেও অবরোধের কারনে রাঙ্গামাটি থেকে দুরপাল্লার বাস চলাচল করেনি এবং নৌ পথের উপজেলাগুলোতে কোন নৌ যান চলাচল করেনি।
এদিকে বান্দরবানে ২৩ মে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধের কর্মসূচি সাপ্তাহিক হাটবার হওয়ায় জনগণের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে কর্মসুচি কিছুটা শিথিল করা হয়।
গত ২১ মে খাগড়াছড়িত অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ২৩ ও ২৪ মে লাগাতার ৩৬ ঘন্টা এবং বান্দরবানে ২৩ মে সকাল সন্ধ্যা এ সড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা দেয়।এর আগে ১৮ মে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে ২০ মে‘র মধ্যে ভূমি কমিশনের শুনানী বাতিলের সময় সীমা বেঁধে দেয়া হয়।পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও নির্বাচিত জুম্ম জনপ্রতিনিধি সংসদ সহ বিভিন্ন সংগঠন এ অবরোধ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানায়।
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি নতুন কুমার চাকমা এক বিবৃতিতে লাগাতার ৩৬ ঘন্টার সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি সফল করার জন্য সকল যানবাহন মালিক সমিতি, শ্রমিক সংগঠন, ব্যবসায়ী, যুব সমাজ ও সর্বস্তরের জনগণ এবং প্রশাসনের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি সমস্যা একটি প্রধান সমস্যা।সর্বস্তরের জনগণের প্রত্যাখ্যান ও প্রতিবাদ বয়কটের পরও ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী একতরফাভাবে শুনানী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।যার মাধ্যমে তিনি সেটলারদেরকে দেয়া অবৈধ ভূমি বন্দোবস্তকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করছেন।এটা পাহাড়িদের নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদের চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িরা যুগ যুগ ধরে প্রথাগত পদ্ধতিতে ভূমি ভোগ-দখল করে আসছে।কিন্তু কমিশন এই অধিকারকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বিশেষ বিধান প্রয়োগের মাধ্যমে ভূমি সমস্যার সমাধানের চক্রান্ত করছেন।এটা কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না এবং পাহাড়ি জনগণ এ ধরনের অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত কিছুতেই মেনে নেবে না।
তিনি আগামী ৩০ মে‘র মধ্যে শুনানী বাতিলের সময় সীমা বেঁধে দিয়ে বলেন, এর মধ্যে যদি কমিশনের এক তরফা শুনানী কার্যক্রম বাতিল করা না হয় তাহলে আবারো বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
তিনি অবিলম্বে ভূমি কমিশনের এক তরফা শুনানী কার্যক্রম বাতিল করা ও ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীকে অপসারণ, পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি এবং ভূমি কমিশন আইনের বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক ধারা সংশোধন না করা পর্যন্ত কমিশনের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখা, বেদখলকৃত ভূমি ফিরিয়ে দেয়া, সেটলারদের দেয়া অবৈধ ভূমি বন্দোবস্তি বাতিল ও তাদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সমতলে সম্মানজনক পুনর্বাসনের দাবি জানান।