বান্দরবানে ৫ কেজির বেশি চাল নিতে পুলিশের বাধা!

0
ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবান, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল ২০২৪

বান্দরবানের রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি ও চিম্বুক পাহাড়ের বাসিন্দাদের পাঁচ কেজির বেশি চাল পরিবহনে বাধা দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার পর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর চলমান অভিযানের মধ্যে মঙ্গলবার থেকে ৫ কেজির বেশি চাল পরিবহণের ক্ষেত্রে পুলিশের অনুমতি নিতে বলা হচ্ছে।

পুলিশ বলছে, এটি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথবাহিনীর অভিযানের অংশ। সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের খাদ্য ও অর্থ যোগান বন্ধ করতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

থানচি উপজেলার স্থানীয় মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাঁচ কেজির বেশি চাল নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশ চেকপোস্টে আটকে দোকানে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ত্রিপুরা জানান, গতকাল বাসায় চাল শেষ হয়ে গেছে। তাই বাজার থেকে চাল কিনে বাড়ি যাচ্ছিলাম। পথে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা আমাকে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করেন এত চাল কেন। বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি বলার পর তারা জানান কেউ পাঁচ কেজির বেশি চাল বহন করতে পারবে না। থানায় গিয়ে আগে ওসির অনুমতি নিয়ে আসতে হবে।

উপজেলার নারিকেল ও আপ্রু মং পাড়া নিবাসী দুই মারমা বলেন, বাজারে গিয়ে বিশ কেজি চালের বস্তা কিনে নিয়ে আসছিলাম। পথে পুলিশ ও আনসার বাহিনীরা বাধা দেয়, বলে এত চাল নিয়ে যেতে পারব না। কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, ওপরের নির্দেশ। ওসির অনুমতি নিতে হবে। নিরুপায় হয়ে চালের বস্তা আবার দোকানে ফেরত দিয়ে আসি।

একই অবস্থায় চলছে চিম্বুক পাহাড়েও। পাহাড়ের এম্পো পাড়া, বাগানপাড়া, ১৮ মাইল চিম্বুক পাড়া এলাকার বাসিন্দারা বান্দরবান সদর থেকে চাল কিনে নিয়ে যাওয়ার পথে মিলনছড়ি এলাকায় পুলিশ চেকপোস্টে তাদের আটকে দেওয়া হয় এবং চাল ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

বান্দরবান চিম্বুক রোডে থ্রি-হুইলার যান চালক মো. আরিফ বলেন, গতকাল ৩-৪ জনের চালের বস্তা নিয়ে ভাড়ায় যাচ্ছিলাম। মিলনছড়ি এলাকার পুলিশ চেকপোস্টে আটকে দিয়ে চাল বান্দরবান ফেরত পাঠাতে বলে। ম্রোদের উদ্দেশে পুলিশ বলেছে, কেউ পাঁচ কেজির বেশি চাল বহন করতে পারবে না।

চিম্বুক পাহাড়ের ক্রামাদি পাড়ার বাসিন্দা সিংপাত ম্রো বলেন, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে আমাদের সাধারণ জনগণের ওপর এভাবে অমানবিক হওয়াটা কখনো কাম্য নয়। চিম্বুক পাহাড়ে এমনিতেই পানির সংকট। তার মধ্যে আবার চাল বহনে বাধা। এত সংকটে ফেলে দিলে মানুষ যাবে কোথায়।’

জানতে চাইলে থানচি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থোয়াই হ্লা মং মারমা বলেন, অনেকের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়ে গতকাল উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে প্রশাসন, ওসি, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিদের সামনে বিষয়টি উপস্থাপন করি। সন্ত্রাস নির্মূল অভিযানের কারণে নিরপরাধ মানুষ যেন খাদ্যাভাবে না ভোগে।
যোগাযোগ করা হলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসেন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি জানান, রুমা-থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির পর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথবাহিনীর অভিযানের অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সন্ত্রাসীদের কে বা কারা খাদ্য যোগান দিচ্ছে বা অর্থ যোগান দিচ্ছে, সেটা কোনোভাবেই নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তাই উপরের নির্দেশনা অনুযায়ী অভিযান চলাকালে এই স্যাক্রিফাইসটুকু করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

৫ কেজি চাল কীভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনার সমন্বয়ক সেনাবাহিনী। তারা এ বিষয়ে সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন। আমরা নির্দেশ অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।

প্রসঙ্গত, চলতি মাসের শুরুতে রুমা উপজেলার সোনালী ব্যাংক এবং থানচির সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর ১৪ অস্ত্র লুট এবং সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নিজামুদ্দিনকে অপহরণ ঘটনার পর অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ, আনসার, র‍্যাব ও সেনাসদস্যদের সমন্বয়ে যৌথবাহিনী। মাত্র ১৬ ঘণ্টার ব্যবধানে এসব ডাকাতির ঘটনা সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ ঘটিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অভিযানে এ পর্যন্ত ৫৫ জন সন্দেহভাজনকে আটকের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সূত্র: যুগান্তর



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More