রমেল চাকমার ১ম শহীদ বার্ষিকীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মরণসভা ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন

0
8

চট্টগ্রাম : আজ ১৯ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার, পিসিপি নেতা শহীদ রমেল চাকমা’র ১ম মৃত্যুবার্ষিকীতে এক স্মরণসভা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুনয়ন চাকমা ও চবি শাখার সাধারণ সম্পাদক রুপন চাকমা।

স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, রমেল চাকমা ছিলেন একজন প্রতিবাদী তরুণ। তিনি নান্যাচর কলেজে পড়তেন এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। এক চোখে দেখতে পেতেন না। তাকে গত বছর যখন গ্রেফতার করা হয় তখন তিনি এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। সেদিন তিনি সাপ্তাহিক হাটের দিনে নান্যাচর বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন। সেসময় নানিয়ারচর সেনা জোন থেকে একদল সেনা সদস্য তাকে কোন অভিযোগ ছাড়া উপজেলা সদর থেকে আটক করে। আটকের পর জনসম্মুখে তাকে মারধর করা হয় এবং জোনে নিয়ে যাওয়া হয়।

জোনে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে সেখানেও মারধরসহ অমানুষিক শারীরিক নির্য়াতন চালানো হয়। এসময় রাঙামাটি ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার থেকে জিটু মেজর তানভীর ছুটে যান নানিয়ারচর জোনে। গিয়ে আটক রমেল চাকমার উপর ঝাপিয়ে পড়েন তিনি। নির্দয়ভাবে বিভিন্ন কায়দায় নির্যাতন চালাতে থাকেন মেজর তানভীর। এমনকি তার গোপনাঙ্গেও মারাত্মক আঘাত করা হয়। সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি এক পর্যায়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অবস্থা বেগতিক দেখে সেদিন রাত ১১টার দিকে তাকে থানায় হস্তান্তরের চেষ্টা করা হয়। থানার ওসি অসুস্থ রমেলকে গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে উপজেলা সদর হাসতালে ভর্তি করতে বাধ্য হন তারা। এরপর শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে উপজেলা হাসপাতল কতৃপক্ষ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসতালে প্রেরণ করে। সেখানে সেনা প্রহরায় চিকিৎসা চলাকালীন ১৯ এপ্রিল তার মৃত্যু হয়।

মৃত্যুর পর তার লাশটি বাড়ি নিতে দেয়া হয়নি। বাড়ি নেয়ার সময় মাঝ পথ থেকে মরদেহটি কেড়ে নেয় সেনাবাহিনী। সামাজিক ও ধর্মীয় বিধিবিধান ব্যাতিরেখে পেট্রোল ঢেলে লাশ পুড়িযে ফেলা হয়। এ ঘটনার মধ্যদিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে সেনাবাহিনী এক কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করেন।

বক্তারা আরো বলেন, সেনা নির্যাতনে রাজনৈতিক কর্মী রমেল চাকমার মৃত্যু হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর বিতর্কীত ভূমিকা দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। প্রতিবাদ ‍বিক্ষোভও হয় সর্বত্র। কিন্তু এদতসত্বেও নান্যাচর জোনের অধিনায়ক লেঃ কঃ বাহালুল আলম ও মেজর তানভীরের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী তথা সরকারের পক্ষ থেকে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তারা এখনো নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এর মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় মদদে জাতিগত দমন-পীড়ন চলছে। যদি তা না হতো তাহলে এ খুনের দায়ভার গোটা সেনাবাহিনী এবং সরকার নিতো না। এবং খুনিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতো এবং রমেল চাকমার পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ দেয়া হতো। সে কোনটাই করেনি রাষ্ট্র।

স্মরণসভা শেষে শহীদ রমেল চাকমার প্রতিবাদী চেতনার প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রদীপ প্রজ্জ্বন করা হয়। এসময় তার প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
_______
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.