পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ প্রসঙ্গে কিছু কথা

0

।। পারদর্শী ।।
জনসংহতি সমিতি ও আওয়ামী লীগ সরকারের মধ্যেকার ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত চুক্তিকে তথাকথিত “শান্তিচুক্তি” নাম দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তির বাণী ছড়ানো হয়েছিল এবং এখনো হচ্ছে। যদিও চুক্তিতে “শান্তি” নামক শব্দটির ছিটেফোটাও উপস্থিতি নেই। সাধারণ জুম্ম জনগণ তথাকথিত এই শান্তির বাণী শুনে যারপরনাই খুশীতে আত্মহারা হয়ে পড়েছিল। সরকার শুধু শান্তির বাণী প্রচার করে ক্ষান্ত থাকেনি। তার সাথে আনা হয় উন্নয়নের ধারণা। একই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি সৃষ্টিকারী, নিপীড়ক সেনাবাহিনী সম্প্রীতি নামে আরো একটি শব্দ যোগ করে “শান্তি-সম্প্রীতি-উন্নয়ন” নামে একটি শ্লোগান দাঁড় করায়। যা এখন সেনাবাহিনীর সকল অনুষ্ঠানে, সাইনবোর্ডে শোভা পায়। আদতে কি এরা পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চায়? উত্তর হচ্ছে- না, আসলে এরা অশান্তি সৃষ্টি করে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়ন কার্য চালাতে সদা তৎপর রয়েছে।

CHT1পার্বত্য চুক্তিতো আসলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য করা হয়নি। যদি তাই হতো তাহলে চুক্তির পরপরই এখানে শান্তি বিরাজ করতো। সেনাবাহিনীর নিপীড়ন-নির্যাতন-হয়রানি, ভূমি বেদখল-উচ্ছেদ, সাম্প্রদায়িক হামলার মতো ঘটনা ঘটতো না। মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারতো। কিন্তু কই শান্তিতো অধরা রয়ে গেছে। চুক্তির আগে সেনাবাহিনী যেভাবে সাধারণ জনগণের উপর নির্যাতন করতো, বর্তমানেও তাই করছে। সাজেক, মারিশ্যা, দীঘিনালা, পানছড়ি, খাগড়াছড়ি, মহালছড়ি, মাটিরাংগা, গুইমারা, মানিকছড়ি লক্ষ্মীছড়ি সহ সর্বত্র এখন সেনাবাহিনীর নিপীড়ন-নির্যাতন জারি রয়েছে। এসব এলাকায় প্রতিনিয়ত সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাতে-বিরাতে ঘরবাড়ি তল্লাশি, হয়রানি, ধরপাকড় চালিয়ে যাচ্ছে। তাহলে এটা কিসের শান্তি?

আর উন্নয়ন? এ তো আরেক ভয়ঙ্কর ব্যাপার স্যাপার। পাহাড়িরা অবশ্যই উন্নয়নের বিরোধী নয়। কিন্তু যে উন্নয়ন পাহাড়িদের নিজ বসতভিটা, জায়গা-জমি থেকে উচ্ছেদ করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন কেড়ে নেয়, সে ধরনের উন্নয়নতো পাহাড়িরা চায় না। পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের নামে যা হচ্ছে তা পাহাড়িদের জায়গা-জমি বেদখলেরই মহোৎসব ছাড়া আর কিছুই নয়।

পার্বত্য চুক্তির পর এ পর্যন্ত পাহাড়িদের উপর কমপক্ষে ২০টির মতো সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত হয়েছে। এসব প্রতিটি হামলার ঘটনায় সেনাবাহিনী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল। এখানে সেটলার বাঙালিদের দিয়ে প্রতিনিয়ত জমি-জমা বেদখলের মাধ্যমে পাহাড়ি উচ্ছেদ করে, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিয়ে পাহাড়িদের উপর হামলা চালিয়ে কিসের সম্প্রীতি? একদিকে শান্তি সম্প্র্রীতির কথা বলা, অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক হামলা- এভাবে আর কতদিন চলবে?

পার্বত্য চট্টগ্রামে “শান্তি, উন্নয়ন ও সম্প্রীতি” নামক বটিকা জোর করে গেলানোর চেষ্টা করছে সরকার ও তার পরিচালিত সেনাবাহিনী। কিন্তু সরকারের মনে রাখা দরকার যে, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস জারি রেখে, বসতভিটা-জমিজমা থেকে উচ্ছেদ করে, সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়ে, উগ্রসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যমূলক নীতি প্রয়োগ করে শান্তি ও উন্নয়ন কিছুতেই সম্ভব নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণকে অধিকার বঞ্চিত রেখে, তাদের উপর নিপীড়নের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে না। আর জোর করে উন্নয়ন নামক বটিকা যদি গেলানোর চেষ্টা করা হয়, ভুমি ও বসতভিটা থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা চলে তাতে পাহাড়িরা প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুললে এর দায়তো সরকারকেই নিতে হবে।

[মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখাগুলো লেখকের নিজস্ব মতামতই প্রতিফলিত]
——————-

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More