পাহাড়ে উৎসব: আজ চাকমাদের ‘মুল বিঝু’, ত্রিপুরাদের ‘হারি বৈসু’, মারমাদের ‘পেইংছুয়ে’

0

নিজস্ব প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৩

চাকমাদের মূল বিঝুর প্রধান আকর্ষণ “পাজন”।

পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈ-সা-বি (বৈসু-সাংগ্রাই-বিঝু-বিষু, বিহু…) উৎসব চলছে। আজ ১৩ এপ্রিল চাকমা সম্প্রদায় পালন করছে ‘মূল/মূর বিঝু’ উৎসব। তাদের আজ উৎসবের দ্বিতীয় দিন। একইভাবে তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়েরও আজ ‘মূল বিষু’ উৎসব।  অপরদিকে ত্রিপুরা ও মারমা সম্প্রদায় আজই আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসব শুরু করেছে। আজ তাদের উৎসবের প্রথম দিন। ত্রিপুরাদের আজ ‘হারি বৈসু’ আর মারমাদের ‘পেইংছুয়ে’ উৎসব।

চাকমাদের মূল/মূল বিঝু: চাকমা সম্প্রদায় আজ ‘মূল/মূর বিঝু’ উৎসব পালন করছে। আজ সারাদিন ঘরে ঘরে চলবে অতিথি আপ্যায়ন।

আগেকার দিনে শিশুরা মূল বিঝুর এ দিনটির আশায় নানা ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকে। এদিন তারা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুরগীর জন্য খাদ্য (আধার) দিয়ে আসে। তারা বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রণাম জানায় এবং তাদের কাছ থেকে আশীর্বাদ গ্রহণ করে। গৃহিনীরা তাদের নানান ধরনের পিঠা ও খাবার খেতে দেয়। এদিন ভোর থেকে তরুণীরা দল বেঁধে নদী থেকে জল তুলে গ্রামের বুড়ো-বুড়িদের স্নান করায় আর তাদের কাছ থেকে আশীর্বাদ গ্রহণ করে। আজকাল অবশ্য এ দৃশ্য খুব কমই চোখে পড়ে।

মূল বিঝুর প্রধান আকর্ষণ ‘পাজন’। কমপক্ষে ২২ প্রকার বিভিন্ন শাক-সবজিসহ নানাবিধ শুটকির মিশ্রণে এ পাজন রান্না করা হয়। এই পাজন-ই হচ্ছে মূল বিঝুর মূল আকর্ষণ। এছাড়া এদিন বিভিন্ন পিঠা-পায়েস, ফল-মুল, পানীয়সহ বিভিন্ন খাদ্য পরিবেশন করা হয়। চাকমাদের মধ্যে বিনি পিধা, সান্যাপিধা, কলাপিধা, বরাপিধা ইত্যাদি নাম উল্লেখযোগ্য।

ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে, তরুণ-তরুণিসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ দিনভর ঘরে ঘরে ঘুরে পাজনসহ নানা খাদ্য খেয়ে বেড়ায়। মনে করা হয় কমপক্ষে ৭টি বাড়িতে পাজন খেলে অনেক রোগব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা যায়। মূল বিঝুর দিনটিতে কাউকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রয়োজন পড়ে না। ইচ্ছেমতো যে কারোর বাড়িতে অতিথি হওয়া যায়। সারাদিন গৃহদ্বার উন্মুক্ত থাকে অতিথিদের জন্য।

অতিথি আপ্যায়নের জন্য ঘরে ঘরে চলছে পাজনসহ অন্যান্য খাবার পরিবেশনের প্রস্তুতি। রান্নাবান্না শেষে সারাদিন চলবে অতিথি আপ্যায়ন।

ত্রিপুরাদের হারি বৈসু: ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বৈসু উৎসবের আজ প্রথম দিন হারি বৈসু। আজ নানান ধরনের ফুল দিয়ে ঘর সাজিয়ে ঘরগুলোকে সুবাসিত করে তোলা হয়। ঘরের গৃহপালিত প্রাণি গরু-ছাগলকে ফুলের মালা পরানো হয়।

এরপর কিশোর কিশোরীরা দলবেঁধে ছড়া-নদীতে গোসল করে ফুল দিয়ে মঙ্গল কামনা করে বাড়িতে ফিরে মাইলোংমা (লক্ষ্মী) আসনে ফুল-ধূপবাতি দিয়ে পুজা সম্পন্ন করে থাকে। বিশেষ করে বাড়ির মায়েরাই ফুল দিয়ে গঙ্গা পুজা করে থাকে।

মারমাদের পেইংছুয়ে: মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসবের আজ প্রথম দিন পেইংছুয়ে। উৎসবের প্রথম দিনে পাড়া-গ্রামের যুবক যুবতীরা নদী থেকে পানি তুলে প্রবীণদের গোসল করিয়ে আশীর্বাদ নেয়। দল বেঁধে বিহার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা ও বুদ্ধ মূর্তি গুলোকে স্নান করানো হয়। এছাড়া আয়োজন করা হয় সাংগ্রাই র‌্যালির।

বৈ-সা-বি উৎসবের মাধ্যমে পাহাড়ি জাতিসত্তাগুলো নিজেদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি তুলে ধরার চেষ্টা করে। উৎসবের মূল চেতনা হচ্ছে ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ। পুরাতন বছরে দুঃখ-গ্লানি মুছে গিয়ে নতুন বছরে সকলের সুখ, শান্তি ও সমদ্ধি কামনা মধ্য দিয়েই উৎসবটি পালন করা হয়।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More