সংস্কারবাদী গ্রুপ ত্যাগ করেছেন রাহুল

0

বাঘাইছড়ি॥ দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর জেএসএস সংস্কারবাদী গ্রুপে কাজ করার পর হতাশ হয়ে দল ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন নির্মল চাকমা। তার দলীয় নাম রাহুল। পিতার নাম বিনয় কুমার চাকমা।

গত ১৬ এপ্রিল তিনি তার নিজ বাড়ি বাঘাইছড়ির বঙ্গলতলি ইউনিয়নের আগালাছড়া গ্রামে ফিরে আসেন।

সংস্কারবাদী গ্রুপ ত্যাগ করার কারণ জানতে চাইলে ৩২ বছর বয়সী রাহুল বলেন, ‘কয়েকটি কারণে আমি পার্টির (সংস্কারবাদী) উপর বীতশ্রদ্ধ হয়েছি। আমি মনে করেছিলাম জেএসএস (সংস্কারবাদী) একটি ভালো দল। তাই আমি খুবই উৎসাহ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। পুরাতন পার্টি, ভেবেছিলাম অনেক কিছু শিখতে পারবো। কিন্তু গিয়ে দেখি সেখানে আন্দোলনের কোন কথাবার্তা নেই। “দেশ-জাত” উদ্ধারের কোন আলোচনা নেই।’

‘তারপরও মেনে নিয়েছি। কিন্তু যখন দেখলাম সরকার বা আর্মিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা সংগ্রাম নয়, বরং যারা আন্দোলন করছে, যারা আমাদের ভাই, সেই ইউপিডিএফ-কে দমন করার জন্য আর্মিদের সাথে যেতে হয়, তখন সত্যিই আমার মন ভেঙে যায়।’

তিনি বলেন যখন সংস্কাররা বর্মাদের দিয়ে ইউপিডিএফকে ঠোকানোর জন্য একটি সংগঠন (নব্য মুখোশ বাহিনী) গঠন করে দেয় তখন ‘আমি মানসিকভাবে খুবই ভেঙে পড়ি’।

রাহুল জানান, সংস্কারবাদী নেতা প্রজ্ঞান খীসার সহকারী জুপিটার প্রায়ই তার দলের লোকজনকে ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে থাকে।

তিনি বলেন, ‘অনেক সময় দলের কর্মীরা ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার সময় সাথে করে সামরিক ড্রেস নিয়ে যেতে চাইতো। অনেকে তাতে বাধা দিতো, কারণ আর্মিদের হাতে ধরা পড়লে অসুবিধায় পড়তে হবে। এ সময় জুপিটার বলে “কেন ভয় পাও, তোমার কাছ থেকে ড্রেস বা অস্ত্র আর্মিরা যাই পাক, বলো তুমি বর্মা গ্রুপের লোক। তখন আর্মিরা কেন, আর্মির বাপও তোমাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে।’

রাহুল সংস্কার দলে কাজ করার সময় তার গ্রুপটি মূলত দীঘিনালা, বোয়ালখালি, আজাপাড়ার দিকে অবস্থান করতো। তবে কিছু সময় তাকে গুইমারার দিকেও যেতে হয়েছে। আর দল ত্যাগ করার আগে তাকে পানছড়িতে যেতে হয়।

তিনি জানান তাদের খাবার মেনুতে সব সময় মাছ-মাংস থাকতো; এবং কেউ বেনসন ছাড়া সিগারেট ফুঁকতো না। প্রতি মাসে তাদের কর্মীদের ভাতা ও খাওয়া দাওয়ার জন্য ১৯ লক্ষ টাকা খরচ হয় বলে দলের ভিতরে নেতারা বলাবলি করতে তিনি শুনেছেন।

গত ১২ এপ্রিল পানছড়িতে সংস্কারবাদীদের সশস্ত্র দলটি ইউপিডিএফ-ভুক্ত পিসিপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার জন্য এমবুশ করেছিল বলেও তিনি তথ্য দেন। তবে একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য তাদের এমবুশ সফল হয়নি।

রাহুল মনে করেন ইউপিডিএফ ও সংস্কারবাদীদের মধ্যে সংঘাত হলে কোন দলেরই লাভ হবে না, বরং সরকার ও সেনাবাহিনীরই লাভ হবে।

তিনি কখনোই নিজ ভাইয়ের বুকে গুলি চালাতে প্রস্তুত নন বলে জানান এবং সংস্কারবাদী দলের নেতা কর্মীদের প্রতিও আহ্বান জানান তারাও যেন সংঘাতের পথ পরিহার করেন এবং নিজ ভাইয়ের ওপর হাত তোলা থেকে বিরত থাকেন অর্থাৎ নিজ ভাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করেন।

তিনি বলেন সংঘাত বন্ধ হলে এবং সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন হলে তিনি তখন স্বেচ্ছায় তাতে যোগ দেবেন। নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে অযথা নিজের শক্তি ক্ষয় করবেন না। তবে তার বিশ্বাস সংস্কারবাদীরা জনগণের জন্য আদতে কোন আন্দোলন করবে না। তাদের সেই ধরনের মানসিকতা ও প্রস্তুতি নেই।
———————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More