শিক্ষা দিবসে ঢাকায় পিসিপি’র বিক্ষোভ : পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ন্যায্য কোটা বহাল রাখার দাবি
ঢাকা : শিক্ষা দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র সংগঠন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)।
আজ ১৭ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১১টায় মধুর ক্যান্টিন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কলা ভবন প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাষ্কর্যে গিয়ে সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ন্যায্য কোটা ব্যবস্থা বহাল রাখার দাবি জানানো হয়।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিনয়ন চাকমার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক বরুন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ঢাকা শাখার আহ্বায়ক কইঞ্জনা মারমা ও পিসিপি’র ঢাকা শাখার সহসভাপতি শুভাশীষ চাকমা। সমাবেশ পরিচালনা করেন পিসিািপ’র কেন্দ্রীয় সহসভাপতি বিপুল চাকমা।
সমাবেশে বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ন্যায্য কোটা বাতিল করার চক্রান্তের সমালোচনা করে বলেন, এ জনগোষ্ঠীসমূহ এমনিতেই নানা বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার, তার ওপর তাদের ন্যায্য কোটা কেড়ে নেওয়ার জন্য সরকার উঠে পড়ে লেগেছে। কোটা পর্যালোচনা কমিটির ন্যায্য কোটা বাতিলের সুপারিশ অগ্রহণযোগ্য ও অযৌক্তিক উল্লেখ করে তারা বলেন, এটা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে পিছিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়।
সমাবেশে বক্তারা, ন্যায্য কোটা বাতিলের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সকল জাতিসত্তার প্রতি আহ্বান জানান ।
বক্তারা আরো বলেন, সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানসহ শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবিতে পিসিপি দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু সরকার এখনো সে দাবিসমূহ বাস্তবায়ন করছে না। আন্দোলনের মুখে সরকার প্রাক প্রাথমিকে ৫টি জাতিসত্তার মাতৃভাষার বই প্রদান করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এ ব্যাপারে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসনের মাধ্যমে দমন-পীড়নের অন্যতম লক্ষ্য ছাত্র সমাজ। একারণে ছাত্রসমাজের ওপর অব্যাহতভাবে দমনপীড়ন চলছে। এ দমনপীড়নে অংশ হিসেবে সেনাবাহিনী ও তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী কর্তৃক ছাত্র নেতারা হত্যার শিকার হচ্ছেন। যার জ¦লন্ত দৃষ্টান্ত হচ্ছে সেনা-প্রশাসনের মদদপুষ্ট জেএসএস সংস্কার-নব্য মুখোশবাহিনী সন্ত্রাসী কর্তৃক খাগড়াছড়ি সদরের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর আবাসস্থলের সন্নিকটে ছাত্র নেতা তপন-এল্টন ও যুব নেতা পলাশ চাকমাসহ ৭ জনকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যার ঘটনা। এছাড়া গত বছর সেনা নির্যাতনে এইচএসসি পরীক্ষার্থী রমেল চাকমা হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ সমস্ত ঘটনার তদন্ত-বিচার হচ্ছে না, শাস্তি হচ্ছে না দোষী সেনা কর্মকর্তাদের।
তারা বলেন, সেনাপ্রশাসন ছাত্র সমাজকে দমিয়ে করে রাখার জন্য স্কুল-কলেজে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। খোদ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নবীন বরণ অনুষ্ঠানকেও রাষ্ট্রদ্রোহ আখ্যায়িত করে অগণতান্ত্রিক সার্কুলার জারি করা হয়েছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না পার্বত্য চট্টগ্রামে ছাত্র সমাজের ওপর কি ধরনের নির্মম দমন-পীড়ন চলছে।
সমাবেশে বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ন্যায্য কোটা ব্যবস্থা বহাল রাখার জোর দাবি জানান।
বক্তারা সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের দাবিসহ পিসিপি’র শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবিনামা বাস্তবায়ন, তপন-এল্টন-পলাশ চাকমাসহ ৭ খুনে জড়িত সন্ত্রাসীদের ও তাদের মদদদাতা খাগড়াছড়ি ব্রিগেড কমাণ্ডার ব্রিগেডিয়ার মোতালেবকে গ্রেফতার করে ফাঁসি দেয়া এবং সন্ত্রাসের মদদদাতা ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি জাহাঙ্গীরকে বিচারের সম্মুখীন করার দাবি জানান।
—————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।