দীঘিনালায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে তামাক চুল্লি
সিএইচটিনিউজ.কম ডেস্ক
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে তামাক চুল্লি নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। এ ছাড়া তামাক চাষের কারণে আশপাশের লোকজন আছেন স্বাস্থ্য-ঝুঁকিতে।
দীঘিনালা উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে হাসিনসনপুর উচ্চবিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুটি পাশাপাশি অবস্থিত।
হাসিনসনপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবপ্রিয় বড়ুয়া বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ের চারপাশে সাতটি তামাক চুল্লি নির্মাণ করা হয়েছে। এসব চুল্লি থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়ার কারণে পাঠদানও ব্যাহত হচ্ছে। এই বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়া থেকে বাঁচতে বিদ্যালয়ের এক পাশের জানালা সব সময় বন্ধ রাখতে হয়।
বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আল আমিন, বাবুল চাকমা ও জহুরা আক্তার বলল, চুলায় যখন আগুন দেওয়া হয়, তখন চুলা থেকে ঝাঁজালো গ্যাস ও ধোঁয়া বের হয়। এ সময় চোখ জ্বালা করে ও মাথা ঘুরায়। কিছুক্ষণ পর পর মুখ ধুয়ে তারা ক্লাস করে। চুলার পাশের কক্ষের সব জানালা বন্ধ করে রাখলেও গ্যাসের গন্ধ চলে আসে।
হাসিনসনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাকিব হোসেন, শান্ত চাকমা, চৈতি চাকমা, মরিয়ম আক্তার বলল, চুলায় আগুন দেওয়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যে দুর্গন্ধ বের হয়। এ সময় ক্লাস করতে ভালো লাগে না।
৩ এপ্রিল হাসিনসনপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়ালের পাঁচ ফুট দূরে দুটি তামাক চুল্লি নির্মাণ করা হয়েছে। আর চুল্লির ধোঁয়া নির্গমনের নলগুলো বিদ্যালয়মুখী। একইভাবে হাসিনসনপুর উচ্চবিদ্যালয়ের চারপাশের সাতটি তামাক চুল্লি বিদ্যালয় থেকে ১০-১৫ ফুট দূরে নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিদ্যালয়ের চারপাশে লোকালয়ে অবাধে তামাক চাষ করা হচ্ছে। চুল্লি নির্মাণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের জানালা বন্ধ করে শ্রেণী কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। হাসিনসনপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবপ্রিয় বড়ুয়া বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’
বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানান, ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এই চুল্লিগুলোতে তামাক শুকানো হয়। কবাখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিশ্ব কল্যাণ চাকমা বলেন, ‘যাঁদের তামাক চুল্লি আছে, তারা এলাকায় প্রভাবশালী। আমি তামাক চাষ, চুল্লিতে গাছ পোড়ানো, চুল্লি থেকে নির্গত গ্যাসে পরিবেশ দূষণের ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের মাসিক সমন্বয় সভায় বহুবার আলোচনা করেছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি।’ তামাক চুল্লির ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে, কোনো মালিকই সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলুল জাহিদ পাভেল বলেন, ‘তামাক চুল্লি থেকে গ্যাস নির্গত হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে—এমন অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। আমি বন আইনে ব্যবস্থা নেব।’
সৌজন্যে: প্রথম আলো