বাবুছড়ায় বিজিবি কর্তৃক উচ্ছেদকৃতদের বসতভিটা ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে খাগড়াছড়িতে মানববন্ধন
সিএইচটিনিউজ.কম
খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়ায় বিজিবি কর্তৃক উচ্ছেদকৃত পাহাড়ি পরিবারদের ত্রাণ সহায়তা, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও বসতভিটা ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে খাগড়াছড়ি জেলা শহরের শাপলা চত্বরে মানববন্ধন করেছে খাগড়াছড়ি সতেতন নাগরিক সমাজ। এতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজন অংশগ্রহণ করেন।
রবিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এক ঘন্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে খাগড়াছড়ি পৌর কাউন্সিলর মিলন দেওয়ানের সঞ্চালনায় এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অনন্ত বিহারী খীসার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা, জুম্ম শরনার্থী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষিত চাকমা, বিশিষ্ট সমাজ কর্মী কিরণ মারমা প্রমুখ।
মানববন্ধনে অনন্ত বিহারী খীসা বলেন, সম্প্রতি দীঘিনালায় বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে গ্রামবাসীদেরকে উচ্ছেদ, হামলা এবং অত্যাচার করা হয়েছে। উচ্ছেদের শিকার গ্রামবাসীরা স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতগুলো লোককে অসহায় করার অধিকার সরকারের থাকতে পারে না। তিনি অচিরেই এ সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সন্তোষিত চাকমা বলেন, খাগড়াছড়িতে সেক্টর থাকার পরও কেন দীঘিনালায় ব্যাটেলিয়ন করতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিজিবি ব্যাটেলিয়ন স্থাপনের জন্য এলাকা থেকে গ্রামবাসীদেরকে উচ্ছেদ এবং ২ শতাধিক মানুষের নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। এমনকি মৃত ব্যক্তি ললিত মোহন, পিদিয়্যে এবং শান্তি রাণী চাকমার নামেও মামলা করা হয়েছে। বিজিবির এহেন ঘৃন্য কাজের জন্য আমি নিন্দা জানাচ্ছি।
কিরন মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথাগত আইনকে উপেক্ষা করে জেলা প্রশাসন বিজিবি’র নামে ভূমি হস্তান্তর মাধ্যমে এলাকাবাসীদেরকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। যা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে লংঘন করা হয়েছে।
চঞ্চুমনি চাকমা আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
মানব বন্ধন কর্মসূচীতে আরো উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মধুমঙ্গল চাকমা, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিনোদ বিহারী চাকমা, প্রাক্তন শিক্ষক প্রজ্ঞাবীর চাকমা, হেডম্যান এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ক্ষেত্র মোহন রোয়াজা, লক্ষীছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমা, পানছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা, খাগড়াছড়ি উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান রনিক ত্রিপুরাসহ আরো অনেকে।
মানববন্ধন চলাকালে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি পাঠ করেন মিলন দেওয়ান মনাঙ। এর পরপরই নাগরিক সমাজের একটি প্রতিনিধি দল জেলা প্রশাসক মো: মাসুদ করিম-এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন কিরন মারমা, ক্ষেত্র মোহন রোয়াজা, সুপার জ্যোতি চাকমা, সর্বোত্তম চাকমা, চঞ্চু মনি চাকমা, সন্তোষিত চাকমা, দীপায়ন চাকমা এবং ধীমান খীসা।
স্মারকলিপিতে তাঁরা বাবুছড়ায় বিজিবির ৫১ নং ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপন বন্ধ করে অবিলম্বে বিজিবি সদস্যদের প্রত্যাহার এবং জেলা প্রশাসনের জমি অধিগ্রহণ বাতিল করে পাহাড়িদের নিজ নিজ জমি ফিরিয়ে দেয়া, গত ১০ জুনের হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজিবির দেয়া মিথ্যা মামলা তুল নেয়া; হামলার সাথে জড়িত বিজিবি, পুলিশ ও সেটলারদের গ্রেফতার করে আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং হামলায় আহতদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া, বিজিবির দেয়া উক্ত মামলায় গ্রেফতারকৃতদেরকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি, গ্রামে গ্রামে সেনা ও বিজিবির টহলের নামে জনগণের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক ছড়ানো বন্ধ করা এবং উচ্ছেদকৃত পরিবারগুলোকে যথাযথ ত্রাণ সহায়তা প্রদানের দাবি জানান।
————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।