বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার মানুষের মাতৃভাষায় শিক্ষার দাবী কতদূর?
সিএইচটিনিউজ.কম ডেস্ক:
আর কয়েক ঘন্টা পরই একুশের প্রথম প্রহর। মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে অমর একুশের এই দিনটি এখন পালিত হয় আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে।
তবে বাংলাদেশের ভেতরেই যে বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার বসবাস, তাদের দীর্ঘদিনের দাবী মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তি চুক্তির পর সেই পথ প্রশস্ত হয় এবং ২০১০ সালের শিক্ষানীতিতেও বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষার কথা বলা হয়।
সেই পথ ধরে এ বছর থেকেই পাঁচটি ভাষায় প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা শুরুর কথা থাকলেও শুরু করা যায়নি এই কার্যক্রম।
সরকারের কর্মকর্তারা এখন বলছেন আগামী বছর থেকে এ কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন তারা।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটিসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার লক্ষ লক্ষ মানুষের বসবাস। তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি।
দীর্ঘদিন ধরেই নিজেদের মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের দাবী তোলা হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে এবং সরকারের দিক থেকেও নৃতাত্ত্বিক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে মাতৃভাষায় শিক্ষা দেয়ার বিষয়টি সরকারি নীতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তবে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা বেশ কিছু জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় শিক্ষা কর্মসূচি পরিচালনা করছে।
তেমনই একটি সংস্থা জাবারাং কল্যাণ সমিতি যারা পার্বত্য চট্রগ্রামের তিনটি জেলাতেই কয়েকটি জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় ২০০৬ সাল থেকে শিক্ষা কর্মসূচি পরিচালনা করছে।
সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বলছিলেন “প্রাক-প্রাথমিকে ২ বছরের একটি কোর্স চার ও পাঁচ বছরের শিশুদের জন্য। এরপর ক্লাস থ্রি পর্যন্ত মাতৃভাষায় শিক্ষা দেয়া হয় প্রাথমিকে। আমরা চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা এই তিন ভাষায় পড়াচ্ছি”।
মিঃ বিকাশ ত্রিপুরা বলছিলেন, বেসরকারী সংস্থার পাশাপাশি এ বছরের জানুয়ারি থেকেই চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো, ওরাঁও সাদ্রি এই পাঁচটি জাতিগোষ্ঠীর ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে পার্বত্য এলাকা সহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা দেয়ার বিষয়টি সরকারীভাবে শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি নানা কারণে।
সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব এসএম আশরাফুল ইসলাম বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষা শিক্ষা ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটি কমিটির প্রধান।
তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল কেন তারা এ বছর শুরু করতে পারলেননা?
মিঃ ইসলাম বলেন, “একটি বড় সমস্যা ছিল মূল কন্টেন্ট। আমরা কারিকুলাম ভিত্তিক মূল কন্টেন্ট বাংলায় তৈরি করে পরে তা বিভিন্ন ভাষায় করতে চেয়েছি। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সেই কাজটি অনেক দেরি হয়”।
কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারের সামনে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর ভাষার শিক্ষক সংকট।
মিঃ ইসলাম বলছিলেন একদিকে শিক্ষক সংকট যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি। এখন সরকারের সামনে এটিই বড় চ্যালেঞ্জ।
কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবেলা করা হবে?
পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা পার্বত্য এলাকার শিক্ষার বেশ কিছু বিষয় তাঁর মন্ত্রণালয়ের অধীন।
তিনি বলেন, “সরকারীভাবে শুরু করা না গেলেও বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে পার্বত্য এলাকার কিছু কিছু স্কুলে মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। তবে সরকারী ক্ষেত্রে শিক্ষকের স্বল্পতা একটি চ্যালেঞ্জ”।
আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো একই শ্রেণীতে একই ভাষাভাষী ছাত্রছাত্রী থাকবে এমন নয়। কেননা, পার্বত্য এলাকায় ১১ টি ভাষাভাষি জাতিগোষ্ঠীর মানুষ আছে। কাজেই কোন স্কুলে একটি ভাষার শিক্ষক নিয়োগ করলে তিনি তার মাতৃভাষায় পারলেও অন্য ভাষায় কি করবেন? সুতরাং এ বছরই শুরু করা দুরুহ হবে।
তবে এ বিষয়ে কাজ হচ্ছে বলে জানালেন বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা।
তবে একটি গবেষণা বইয়ে দেখা গেছে সম্প্রতি যে শিক্ষকরা বিভিন্ন ভাষাভাষী শিশুদের পড়াবে তা কিন্তু আমার জানামতে ঠিক করা সম্ভব হয়নি।
মিঃ ত্রিপুরা বলছিলেন সামগ্রিকভাবে মাতৃভাষায় শিক্ষার এই নতুন ধারনাটি বাস্তবায়নে আরো সময় লাগবে।
সৌজন্যে: বিবিসি বাংলা