ঢাকায় সমতার দাবিতে ‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’ অনুষ্ঠিত

0


ঢাকা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

রাজধানী মানিক মিয়া এ্যাভিনিউতে “সমতার দাবিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ” শ্লোগানে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’ কর্মসূচি। গতকাল শুক্রবার (১৬ মে ২০২৫) বিকালে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার নারী। বিকাল ৩টায় অস্থায়ী মঞ্চে জতীয় সংগীত গেয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে প্রতিবাদী গান, নাটিকা, অভিনয় ও সমবেত সংগীত পরিবেশন করা হয়।

এই কর্মসূচিতে প্রগতিশীল নারী, শ্রমিক, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মী, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

কর্মসূচি থেকে জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনায় সমানাধিকারের দাবি জানানো হয়েছে।

নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির ৬৪ সংগঠনের কর্মী ছাড়াও বিভিন্ন নারী উন্নয়ন, সামাজিক, সাস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা এ কর্মসূচীতে সংহতি জানিয়ে অশংগ্রহণ করেন।

সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে- হিল উইমেন্স ফেডারেশন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, নারী মুক্তি কেন্দ্র, উদীচি শিল্পীগোষ্ঠী, আদিবাসী ইউনিয়ন, গামের্ন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন, বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, বাংলাদেশ নারী জোট, নারী সংহতি, ছাত্র ফ্রন্ট (মার্কসবাদী), শ্রমিক অধিকার আন্দোলন ও বাংলাদেশ মহিলা সমিতি প্রভৃতি।

বিকাল ৫টায় মঞ্চ থেকে ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন জুলাই অভ্যুত্থানের শহিদ মামুন মিয়ার স্ত্রী শারমীন আক্তার, জয়ন্তী চাকমা ও সামসীয়ারা জামান।


ঘোষণাপত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসঙ্গে বলা হয়- ‘আদিবাসী’ নারীরা জাতিগত নিপীড়নের শিকার হন। পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীদের ওপর চলে সেনাবাহিনীর অকথ্য নির্যাতন। আজকে যখন অধিকারের দাবিতে আমরা সমবেত হয়েছি, তখন বম নারীরা কারাগারে বন্দি।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়- অন্তর্বর্তী সরকার ও ভবিষ্যতের যেকোনো সরকারকে আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই— নারী, শ্রমিক, জাতিগত, ধর্মীয়, ভাষাগত সংখ্যালঘু, হিজড়া ও লিঙ্গীয় বৈচিত্র্যপূর্ণ পরিচয়ের নাগরিকের রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা কোনো শর্তাধীন নয়, হতে পারে না।  এ মৌলিক বিষয়গুলোকে হুমকির মুখে রাখলে তা হবে অর্ধ শতকের নারী আন্দোলন এবং জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও ইনসাফের ধারণার পরিপন্থী। শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি, ছুটির অধিকার, নিরাপদ কর্ম পরিবেশ ও সংগঠনের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।


ঘোষণাপত্রে আরো বলা হয়- আমরা লড়ছি নারীর ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে; আমরা চাই কৃষক হিসেবে তার পূর্ণ স্বীকৃতি। আমরা চাই শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও বাসস্থানের অধিকার। চাই যৌন ও প্রজনন ক্ষেত্রে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার অধিকার, গোপনীয়তার অধিকার, রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় বিচারিক প্রক্রিয়ায় নির্ভয়ে অংশ নেওয়ার অধিকার। নিপীড়িত নারীর বিচার পাওয়ার, মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন ও সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার। আমাদের লক্ষ্য সম্পত্তিতে নারীর অধিকার ও সব অর্থে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার। আমরা লড়ছি প্রতিবন্ধী ও দেশের সকল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। আমাদের লড়াই পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে, বিচারহীনতার বিরুদ্ধে, জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্বের বিরুদ্ধে।

ঘোষণা পত্রে বলা হয়- অন্তর্বর্তী সরকারকে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে হবে, বিশেষত নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতার হুমকি, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ঘিরে গুজব ও অপপ্রচার, এবং ধর্মীয় মূল্যবোধকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আতঙ্ক সৃষ্টির বিরুদ্ধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।


যারা আমাদের সমর্থন চায়— নির্বাচনী অঙ্গীকারের মাধ্যমে হোক বা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে হোক— তাদের স্পষ্ট করতে হবে নারী, শ্রমিক, জাতিগত, ধর্মীয়, ভাষাগত ও লিঙ্গীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার এবং এসব জনগোষ্ঠীর পূর্ণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ব্যক্তিগত মুক্তির বিষয়ে তাদের অবস্থান। বিশেষ করে আসন্ন নির্বাচন থেকে তাদের প্রার্থীদের অন্তত শতকরা ৩৩ ভাগ (ক্রমান্বয়ে জনসংখ্যার অনুপাতে) নারী হতে হবে।

নারী ও প্রান্তিক জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে অন্তর্বর্তী সরকারকে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়- আমরা দেখেছি ‘নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন’ রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকেই অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত সুপারিশগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে গিয়ে এবং গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনার সুযোগ না রেখে নানাধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। দেশবাসীর সামনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভ্রান্ত ব্যাখ্যা  উপস্থাপন করা হচ্ছে। জনসম্মুখে কমিশনের সদস্যদেরকে জঘন্যভাবে অবমাননা করা হয়েছে। 


এতকিছুর মধ্যে আমরা দেখলাম, জুলাইয়ে অসংখ্য নারীর আত্মত্যাগ ও শহীদদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার নারীর ওপর অব্যাহত নিপীড়ন, অবমাননা ও অপমানের বিরুদ্ধে আশ্চর্যরকম নিশ্চুপ। সরকারের নিজের তৈরি করা নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্যদের ওপর এ ধরনের ন্যাক্কারজনক আক্রমণের পরেও সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

সমতার দাবিকে অবমূল্যায়ন করে, মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষাকে অগ্রাহ্য করে, গণতন্ত্রের স্বপ্নকে সংখ্যাগরিষ্ঠের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণের অস্ত্র বানানোর চেষ্টা চলছে।


বিকাল সোয়া ৫টায় মানিক মিয়া এ্যাভিনিউ থেকে খামারবাড়ি সড়ক হয়ে ফার্মগেট, তারপর ইন্দিরা রোড হয়ে আবার মানিক মিয়া এ্যাভিনিউ পর্যন্ত মৈত্রী যাত্রা করা হয়। অংশগ্রহণকারীদের হাতে ছিল বর্ণিল ব্যানার ও প্লাকার্ড। এ সময় ‘পাহাড় থেকে সমতলে- লড়াই হবে সমান তালে’, ‘পাহাড় থেকে সেনা শাসন তুলে নাও’, ‘ধর্ষণ থেকে আজাদী’, নিপীড়ন থেকে আজাদী’- এ ধরণের ৩১টি স্লোগান দেয়া হয়।

স্লোগানগুলোতে নারীর অধিকার, মর্যাদা, নিরাপত্তা, শ্রমিকের অধিকার, ফ্যাসিবাদের বিরোধিতাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

এছাড়া প্রদর্শন করা হয় বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড।

কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে অংশ নিয়েছিলেন ইউপিডিএফ-এর সংগঠক মাইকেল চাকমা।

এতে পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর সভাপতি নীতি চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা সংগঠনটির নেতৃত্ব দেন। সংগঠনটি এ মৈত্রী যাত্রা কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More