স্বাধিকার বুলেটিন থেকে

পার্বত্য চট্টগ্রামের সমাধান : আশা-আশংকা

0

[এই লেখাটি পার্বত্য চুক্তির আগে ১৯৯৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর স্বাধিকার বুলেটিন (পিসিপি-পিজিপি-এইচডব্লিউএফ-এর যৌথ মুখপত্র)-এর ৩য় সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। লেখাটি যখন প্রকাশিত হয় সে সময় আওয়ামী লীগ সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে বৈঠক চলমান ছিল। এ লেখায় স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছিল যে, “জেলা পরিষদ” ব্যবস্থা ঘষেমজে ‘রাজনৈতিক সমাধান’ হিসেবে চালিয়ে দিতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। দীর্ঘ ২৭ বছরেও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার ক্ষেত্রে স্বাধিকারের মন্তব্য বা মূল্যায়ন প্রতিফলিত হতে দেখা যাচ্ছে। তাই, সিএইচটি নিউজের পাঠকদের জন্য লেখাটি এখানে পুনঃপ্রকাশ করা হলো]

———————————————————–

।। রাজনৈতিক ভাষ্যকার।। 

গোটা পার্বত্যবাসীর দৃষ্টি এবার আগামী জানুয়ারীর বৈঠকের দিকে। বেশ উৎসুক্য আর কৌতুহল রাজনীতি সচেতন মহলে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার “রাজনৈতিক সমাধানের” দু’ দু’বার (’৯১ ও ’৯৬ নির্বাচন) প্রতিশ্রুতিদানকারী আওয়ামী লীগ সরকার আসন্ন ঐ বৈঠকে সমাধানের “চূড়ান্ত রূপরেখা” উত্থাপন করবে। সমাধানের লক্ষ্যে ইতমধ্যে “অত্যন্ত আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে” ২১ ও ২৪ ডিসেম্বর সশস্ত্র আন্দোলনরত জনসংহতি সমিতির সাথে সরকারের দু’দফা বেঠকও অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো।

দীর্ঘ দু’যুগ ধরে রাজনৈতিকভাবে অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এই আলোচনা বৈঠক প্রক্রিয়াও আর নতুন কোন কিছু নয়। জাতীয় পার্টি আর বি.এন.পি’র শাসনামলেও সমাধানের লক্ষ্যে দেড় ডজনের অধিক বৈঠক হয়েছিল। এবারও নতুন সরকার আওয়ামী লীগের সাথে বৈঠক হচ্ছে। তবে, এবার যা সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো তা হচ্ছে, সরকার ও জনসংহতি সমিতি উভয় পক্ষই আলোচনার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ের চিত্র। সংগৃহিত ছবি


প্রধানমন্ত্রী সরাসরি ফোনে বৈঠকের খোঁজ খবর নিয়েছেন। জাতীয় কমিটির আহ্বায়কের মাধ্যমে আলোচনায় নেতৃত্বদানকারী অসুস্থ জনসংহতি সমিতির প্রধানকে ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথিভবনে রেখে চিকিৎসার প্রস্তাব দিয়েছেন। দ্বিতীয় দফা বৈঠক সম্পন্ন করে জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ জনসংহতি সমিতির নেতৃবৃন্দকে দুদুকছড়িতে air lift দিয়ে এসেছেন। বৈঠকের প্রথম দফাতেই আলোচনা ‘ফলপ্রসু’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে। বৈঠক ও সমাধানের ব্যাপারে উভয় পক্ষই “উচ্চ আশাবাদ” ব্যক্ত করেছেন। প্রেস ব্রিফিং-এ জনসংহতি সমিতি থেকে আলোচনাকে ‘ফলপ্রসু’ ‘অর্থবহ’ অভিহিত করে, নতুন সরকারের সাথে বৈঠক নতুনত্ব, নতুন উদ্যোগ ও নতুন উপলব্ধি’র কথা ব্যক্ত হয়েছে।

জাতীয় দৈনিকগুলোতে ব্যানার হেডিং-এ বৈঠকের খবর ছাড়াও সম্পাদকীয় লেখা হয়েছে। কোন কোন দৈনিকে “বৈঠকে নাটকীয় অগ্রগতির” কথা বলা হয়েছে। (জনকণ্ঠ, ডিসেম্বর ২৫, ১৯৯৬)

দৈনিক আজকের কাগজ একইদিন “পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার সমাধান এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র” শিরোনামে সংবাদ ছেপেছে। সর্বত্রই আশাবাদী সুরের প্রতিধ্বনি হয়েছে।

বড় কথা হচ্ছে— দেশের সংবিধানে সংখ্যালঘু জাতিসত্ত্বাসমূহের স্বীকৃতি, ভূমি অধিকার নিশ্চিতকরণ, বহিরাগত ও সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহার এবং সংবিধান সংশোধন করে পার্বত্য চট্টগ্রামের “স্বায়ত্তশাসন” নিশ্চিতকরণ।

যত শীঘ্রই এই সমস্যার যথার্থ সমাধান হবে, ততই পার্বত্যবাসী তথা দেশ-জাতি সবারই মঙ্গল হয়। সমস্যার কারণে, পার্বত্য চট্টগ্রামের পেছনে দৈনিক দেড় থেকে দু’ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে।

দরিদ্র দেশের দুর্বল অর্থনীতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা একটি দুষ্টক্ষত হয়ে আছে। সামরিক সমাধানের ব্যর্থ অভিলাষ চরিতার্থ করতে গিয়ে এ যাবৎ পার্বত্য চট্টগ্রামে বহু সম্ভাবনাময়ী তরুণ সেনা অফিসার ও জওয়ানের জীবন হানি ঘটেছে। কোটি কোটি টাকার জাতীয় সম্পদ নষ্ট হয়েছে। সেনা পরিচালিত অভিযান, দমন পীড়ন ও নারকীয় হত্যাযজ্ঞে শত শত নিরীহ পাহাড়ি খুন হয়েছে। বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ হয়ে শরণার্থী হয়েছে অর্ধলক্ষাধিক লোক। বহু শিশু অনাথ হয়েছে। বহু মায়ের কোল খালি হয়েছে। অনেক নারী স্বামী হারা হয়েছেন।

অপরদিকে, সহজাত নিয়মেই অন্যায়-অনাচার-অত্যাচারের প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রামেও সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে। বর্বরোচিত সামরিক দমন-পীড়নের প্রতিবাদে সহজ-সরল পাহাড়িরাও লড়াইয়ে নেমেছে। রাইফেল নিয়ে গর্জে উঠেছে পাহাড়ি যুবক। বারুদের গন্ধে উত্তপ্ত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনপদ। স্বাধিকারের দাবীতে বহু তরুণ বীরত্বের সাথে আত্মাহুতি দিয়েছে।

তার পাশাপাশি গড়ে উঠেছে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন। জোরদার হয়েছে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম। পুলিশেল অন্যায় ধরপাকড়, আটক, মামলা, হুলিয়া, সেনাবাহিনীর নিপীড়ন-নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে শিক্ষিত ছাত্র সমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। মিটিঙ, মিছিল, অবরোধ আর হরতালের মাধ্যমে প্রশাসনকে অচল করে দিয়েছে। দাঙ্গা পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট আর বন্দুকের গুলি উপেক্ষা করে স্বায়ত্তশাসনের দাবীতে হাজার হাজার তরুণ রাজপথ প্রকম্পিত করেছে। স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার গণতান্ত্রিক সংগ্রাম চালাতে গিয়ে সাহসিকতার সাথে শহীদ হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের “অস্থির-অশান্ত এই অধ্যায়টির” যবনিকা টানতে হলে, অতি অবশ্যই যথার্থ রাজনৈতিক সমাধান নিশ্চিত করতে হবে।

স্বৈরশাসক এরশাদশাহীর প্রবর্তিত “জেলা পরিষদ ব্যবস্থা” যে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সমাধান নয়, তা হিসেবের মধ্যে রেখেই সমাধানের পথে এগুতে হবে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিগত দু’টি নির্বাচনে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান দেবার প্রতিশ্রুতি দিলেও, নির্বাচনী ইশতেহারে সমাধানের ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোন বক্তব্য বা রূপরেখা ছিলো না। ঐ অস্পষ্টতা সত্ত্বেও, আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতিতে অনেকটা আশ্বস্ত হয়ে পাহাড়ি জনগণ পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী করেছে। যার অর্থ হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা রাজনৈতিকভাবে সমাধান করার জন্য আওয়ামী লীগের প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীদের ম্যান্ডেট প্রদান।

এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে, লোক ঠকানোর উদ্দেশ্যে “জেলা পরিষদ” ব্যাবস্থাকে যদি ঘষামজা করে চটকদার মনোহারী নামের লেভেল এঁটে দিয়ে “রাজনৈতিক সমাধান” হিসেবে বাজারে চালিয়ে দিতে চাইলে, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। 

বর্তমানে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়ে দেশের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সরকার জনসংহতি সমিতির সাথে আলাপ-আলোচনাও চালিয়ে যাচ্ছে। এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে।

আলোচনা বৈঠকের এই সাফল্য ও অগ্রগতি জনমদুঃখী পাহাড়িদের মনে কিছুটা হলেও আশা জাগাবে। কিন্তু অতীতের অনেক ঘটনার কারণে, বর্তমানে এই সাফল্য সত্ত্বেও আরো নানান ভাবনা—জিজ্ঞাসার উদয় হওয়াই স্বাভাবিক।

অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে পাহাড়িরা দেখেছে যে, সমাধানের লক্ষ্যে বৈঠক ‘ফলপ্রসু’ ‘সন্তোষজনক’ হওয়াটা যথেষ্ট নয়। তার কারণ, বৈঠক ‘সন্তোষজনক’ ‘ফলপ্রসু’ হবার পরেও পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান হতে পারেনি। শুধু দফায় দফায় বৈঠকের নামে কালক্ষেপণ হয়েছে।

কাজেই অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে, বৈঠকের অনেক আনুষ্ঠানিকতা, যেমন ফুলের তোড়া দিয়ে অভ্যর্থনা, কোলাকুলি, উপহার দেয়া, সৌহার্দ্যপূর্ণ আলাপ-আলোচনা, রকমারী খানাপিনা এবং বৈঠক শেষে দেয়া “উচ্ছসিত বক্তব্যকে” পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ আর বড় কথা বলে মনে করতে পারে না।

বড় কথা হচ্ছে— দেশের সংবিধানে সংখ্যালঘু জাতিসত্ত্বাসমূহের স্বীকৃতি, ভূমি অধিকার নিশ্চিতকরণ, বহিরাগত ও সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহার এবং সংবিধান সংশোধন করে পার্বত্য চট্টগ্রামের “স্বায়ত্তশাসন” নিশ্চিতকরণ।

পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিপূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ছাড়া অন্য কোন কিছুই পার্বত্যবাসীদের কাছে বড় হতে পারে না। সরকারী পক্ষের উষ্ণ আন্তরিকতা ও সৌজন্যতা প্রদর্শন মানেই দাবী দাওয়া পূরণ হয়ে গেল তা মনে করার ভিত্তি নেই।

পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার “রাজনৈতিক সমাধানের” প্রতিশ্রুতিদানকারী এবং নির্বাচনে পার্বত্যবাসীর ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারকে বৈঠকের আগে জনমনে আস্থাসৃষ্টিকারী পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিলো। যাতে সমাধানের ব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ আশ্বস্ত হতে পারেন।

কিছুকাল আগেও সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্যুটি ছিলো না। খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পার্বত্য চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে অকপটে তা স্বীকার করেছিলেন।

সাম্প্রতিককালের কিছু ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। বৈঠক প্রস্তুতির আড়ালে ঐসব ঘটনা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। সমাধানের লক্ষ্যে সরকার ও জনসংহতি সমিতির আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবার পাঁচদিন আগে ১৫ ডিসেম্বর রাঙ্গামাটিতে ব্রিগেড কমান্ডারের নির্দেশে সেনাবাহিনী ছাত্র-জনতা, নিরীহ পথচারীকে মধ্যযুগীীয় কায়দায় পিটিয়েছে। জখম অবস্থায় ৪ জন ছাত্রকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে প্রথমে সেনাক্যাম্পে নির্যাতন এবং পরে মামলা দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।

বৈঠকের আগে আর স্বাধীনতার রজত জয়ন্তীপূর্তির মাত্র একদিন আগে খোদ রাঙ্গামাটি সদরে একজন পদস্থ সামরিক অফিসারের এই কাণ্ড ঘটানোর পেছনে অন্য কোন মতলব ছিলো কিনা তা ভাবার বিষয়। সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি থানার হাফছড়ি মারমা অধ্যুষিত এলাকায় ২১ নভেম্বর হতে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত হামলা, ৩০টির অধিক বাড়ীঘর পুড়িয়ে দেয়া এবং ৩ মারমা যুবতীর উপর পাশবিক নির্যাতনের ঘটনার প্রেক্ষিতে কোন সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার হবার খবর শোনা যায়নি।

বান্দরবান জেলার থানচি থানার টি.এন.ও. অপহরণ ঘটনাকে শান্তিবাহিনীর উপর দায়-দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে সেনাবাহিনী “বীরত্বের যে নাটকটি মঞ্চস্থ” করে ফলাওভাবে প্রচার করেছে, তা সচেতন নাগরিকদেরকে বেশ লজ্জায় ফেলে দিয়েছে।

সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান চায়। কষ্টকর জীবন নিয়ে পাহাড়ের থাকতে চায় না… ইত্যাদি বক্তব্যও পত্র—পত্রিকায় দেয়া হচ্ছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ছাত্র পরিষদ ও গণপরিষদকে উল্টো নানান অভিযোগে অভিযুক্ত করা হচ্ছে।

বৈঠক প্রক্রিয়া শুরু হলেও, আজ পর্যন্ত কল্পনা চাকমার অপহরণের মূল হোতা লেঃ ফেরদৌসের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবার কথা শোনা যায়নি। সমাধানের পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে, সরকারের তরফ থেকে এখনো আস্থাসৃষ্টিকারী পদক্ষেপ হিসেবে রাজনৈতিক কারণে আটক বন্দীদের মুক্তি দেয়া হয়নি। বি.এন.পি সরকারের আমলের ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা—হুলিয়ার প্রত্যাহার করা হয়নি। PPSPC নামধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। প্রত্যাগত শরণার্থীদের দাবী পুরোপুরি মিটিয়ে দেয়া হয়নি।

বি.এন.পি সরকারের গৃহীত নির্যাতনমূলক পদক্ষেপ ও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখে, সমাধানের পদক্ষেপ নেয়া কতখানি সফল হবে এবং জনমনে আস্থা সৃষ্টি করবে সে সংশয় স্বাভাবিকভাবেই থেকে যায়।

দ্বিতীয় দফা বৈঠকে সরকারও জনসংহতি সমিতি সমাধানের ব্যাপারে “ঐকমত্যে” পৌঁছেছেন বলে প্রেস ব্রিফিং এ দেয়া বক্তব্য থেকে জানা গেছে যে, “ভূমি” ও “বহিরাগতদের” বিষয় ছাড়া বাকী সবগুলো ব্যাপারে “ঐকমত্য” হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ মনে প্রাণে সমাধান চায়। সাথে সাথে এটাও প্রত্যাশা করে যে, সমাধান যা হবে তা যাতে এরশাদ আমলের মতো ত্রুটিপূর্ণ না হয়।

“ভূমি অধিকার” ও “বহিরাগত প্রত্যাহার” এ দু’টি পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে মৌলিক বিষয়। এ দু’টির সন্তোষজনক নিষ্পত্তি ছাড়া যে কোন সমাধান, “টেবিলের দু’ পা না থাকলে যা হয়” সে দশাই হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।

এখানে, সঙ্গত কারণেই স্মরণ করা যেতে পারে যে, আওয়ামী লীগের শাসনামলেই পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সূত্রপাত হয়েছিলো। ২১ বছর পরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যেহেতু সমস্যার সূত্রপাত হয়েছিলো আওয়ামী লীগের আমলে তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাক এটা কমবেশী সবারই প্রত্যাশা।

সমাধানের ব্যাপারে “ঐক্যমত্যের” কথা বলা হচ্ছে। “বাঙালী জাতীয়তাবাদের” বিষয়টির ব্যাপারে কি হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি।

আর যাই হোক সমাধান হলেই সবার মঙ্গল। তবে, এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে, লোক ঠকানোর উদ্দেশ্যে “জেলা পরিষদ” ব্যাবস্থাকে যদি ঘষামজা করে চটকদার মনোহারী নামের লেভেল এঁটে দিয়ে “রাজনৈতিক সমাধান” হিসেবে বাজারে চালিয়ে দিতে চাইলে, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। আমাদের প্রত্যাশা, আগামী ২৫শে জানুয়ারী সরকার পক্ষ সমাধানের যে রূপরেখা উপস্থাপন করবে তাতে পাহাড়িদের আশা আকাঙ্ক্ষা ও দাবী দাওয়ার প্রতিফলন ঘটবে।

(সূত্র: স্বাধিকার বুলেটিন নং ৩, ৩০ ডিসেম্বর ১৯৯৬)



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More