শান্তিপূর্ণ ঘেরাও কর্মসূচিতে প্রশাসনের বাধার প্রতিবাদে ১০ ও ১১ জুন খাগড়াছড়িতে সড়ক অবরোধের ঘোষণা
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশনের এক তরফা শুনানী বাতিল ও প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতির দাবিতে শান্তিপূর্ণ ভূমি কমিশন অফিস ঘেরাও কর্মসূচিতে প্রশাসনের বাধা দেয়ার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে ১০ ও ১১ জুন খাগড়াছড়িতে দুই দিনের সড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম।
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক নিকোলাস চাকমার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আজ ১০ জুন রবিবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এবং আগামীকাল ১১ জুন সোমবার সকাল-সন্ধ্যা এ সড়ক অবরোধ পালন করা বলে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন মিডিয়ায় ফোনের মাধ্যমে ৩৩ ঘন্টার সড়ক অবরোধ ঘোষণা দেয়া হলেও জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে অবরোধের সময় ১২ ঘন্টা কমিয়ে ২১ ঘন্টা করা হয়েছে বলেও প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি নতুন কুমার চাকমা এক বিবৃতিতে অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসন পরিকল্পিতভাবে শান্তিপূর্ণ ঘেরাও কর্মসূচিতে বাধা প্রদান করেছে। খাগড়াছড়ি সদর, পানছড়ি, দিঘীনালা, মাটিরাঙ্গা সহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রশাসন ঘেরাও কর্মসূচিতে আসার সময় জনগণকে বাধা দিয়েছে এবং ভাড়া করা গাড়িগুলো থানায় আটকিয়ে রেখেছে। খাগড়াছড়ি শহরের মহাজন পাড়া থেকে পুলিশ মাইক কেড়ে নিয়ে গেছে। এছাড়া খাগড়াছড়ির ভাইবোন ছড়া এলাকায় সেনাবাহিনী রাস্তায় গাছ ফেলে অবরোধ সৃষ্টির চেষ্টা করেছে।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশনের চেয়াম্যান খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীকে ব্যবহার করে পাহাড়ি জনগণকে নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার পাঁয়তারা করছে।র্ যাব নামিয়ে দিয়ে সরকার আন্দোলন দমনের চেষ্টা করছে। সরকারের এ ষড়যন্ত্র পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ কিছুতেই সফল হতে দেবে না।
বিবৃতিতে তিনি অবিলম্বে ভূমি কমিশনের এক তরফা শুনানী বাতিল, কমিশন আইনের বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক ধারা সংশোধন, ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীকে অপসারণ ও পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতির দাবি জানান।
এদিকে শান্তিপূর্ণ ঘেরাও কর্মসূচি বাধা দেয়ার প্রতিবাদে খাগড়াছড়ি ও দিঘীনালায় বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। খাগড়াছড়ি সদরের বটতলী থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে য়ংডং বৌদ্ধ বিহারের পাশে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক রিকো চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জিকো মারমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি আপ্রুসি মারমা।
অপরদিকে দিঘীনালায় উপজেলা সদরের ইউপিডিএফ কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে থানা বাজার, বাস স্টেশন ঘুরে লারমা স্কোয়ারে গিয়ে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর দিঘীনালা ইউনিটের সংগঠক কিশোর চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক রেমিন চাকমা, নির্বাচিত জুম্ম জনপ্রতিনিধি সংসদে সদস্য জ্ঞান জীবন চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের দিঘীনালা থানা শাখার সহ সভাপতি জীবন চাকমা। সমাবেশ ও মিছিল পরিচালনা করেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের দিঘীনালা থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক আলো জীবন চাকমা।
বক্তারা শান্তিপুর্ণ ঘেরাও কর্মসূচিতে প্রশাসনের বাধা দেয়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাধা দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ফ্যাসিস্ট আচরণ করছে। এই সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে একদিকে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে অপরদিকে জনগণের ভূমি রক্ষার আন্দোলন দমনের জন্য পুলিশ-র্যাব ও সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করছে।
বক্তারা অবিলম্বে ভূমি কমিশনের এক তরফা শুনানী কার্যক্রম বাতিলের দাবি জানান।