আলুটিলায় ‘বিশেষ পর্যটন জোন’ গঠনের প্রস্তাব বাতিলের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি।। খাগড়াছড়ির আলুটিলায় মাটিরাংগা উপজেলাধীন আলুটিলা ও তৈকাতাং মৌজা এবং খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার গোলাবাড়ি মৌজায় ৬৯৯.৯৮ একর পাহাড়ি জমিতে বিশেষ পর্যটন জোন গঠনের প্রস্তাব বাতিলের দাবিতে আজ ৩১ আগস্ট ২০১৬ বুধবার সকালে আলুটিলা ভূমি রক্ষা কমিটিসহ, জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান, কার্বারী, শিক্ষাবিদ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা কার্বারী এসোসিয়েশনের সভাপতি রণিক ত্রিপুরা, গোলাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান জ্ঞান রঞ্জন ত্রিপুরা, পেরাছড়া ইউপি চেয়ারম্যান তপন বিকাশ ত্রিপরা, গোলাবাড়ী মৌজার হেডম্যান উক্যছেইন চৌধুরী, আলুটিলা ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব জয়ন্ত ত্রিপুরা ও সদস্য রিতা রোয়াজার নেতৃত্বে জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান-এর নিকট উক্ত স্মারকলিপিটি প্রদান করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে পেশ করা স্মারকলিপিতে বলা হয়, মাটিরাঙ্গা উপজেলাধীন তৈকাতাং মৌজায় প্রস্তাবিত জমিতে বর্তমানে ১২টি গ্রামে ৩৯৭টি পরিবারের মোট ১,৬৪২ জন পাহাড়ি বসবাস করছেন। এছাড়া এই গ্রামগুলোতে রয়েছে ৫টি হিন্দু মন্দির, ৩টি শ্মশান, ব্র্যাক পরিচালিত স্কুল ১টি, ইউনিসেফ পরিচালিত স্কুল ৪টি ও জাবারাং (এনজিও) পরিচালিত স্কুল ১টি।
আলুটিলা মৌজায় প্রস্তাবিত জমিতে ৮টি গ্রাম অন্তর্ভুক্ত। এসব গ্রামে বাস করছেন ১১৩টি পরিবারের ৪৭১ জন সদস্য। এখানে ২টি হিন্দু মন্দির, ১টি গীর্জা, ১টি কমিউনিটি সেন্টার, ১টি সরকারী স্কুলসহ ৬টি প্রাইমারী স্কুল (হৃদয় মেম্বার পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুনর্বাসন বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্র্যাক স্কুল ২, ইউনিসেফ স্কুল ২) ও ৩টি শ্মশান রয়েছে।
অপরদিকে গোলাবাড়ী মৌজায় অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবিত জমিতে একটি গ্রামের ৮ পরিবারের ৪০ জন পাহাড়ির বসবাস রয়েছে। এছাড়া এখানে ‘আলোক নবগ্রহ ধাতু চৈত্য বিহার’ নামে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের একটি উপাসনালয়, খৃষ্টানদের ১টি গীর্জা ও ১টি শ্মশানেরও অবস্থিতি আছে।
এছাড়া স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, উক্ত তিন মৌজায় প্রস্তাবিত জমিতে ৩৮ ব্যক্তি ও সমিতির নামে শত শত একরের বিভিন্ন ফলজ ও বনজ বাগান এবং ঔষধী গাছ রয়েছে। এইসব বাগান থেকে তারা বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করে তাদের পারিবারে ও সমাজে সমৃদ্ধি আনয়ন করছেন। পাহাড়ি বাঙালি মিশ্রিত জমির মালিকদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সংসদ সদস্য যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা, তার স্ত্রী ক্রাইচাউ মারমা, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাহেদুল আলম, কলেজের শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, সরকারী কর্মকর্তাসহ অনেকে।
স্মারকলিপিতে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, প্রস্তাবিত জমিতে আলুটিলা বিশেষ পর্যটন জোন গঠন করা হলে দুটি উপজেলার তিনটি মৌজায় ২১টি গ্রামের ৫১৮টি পরিবারের ২,১৫৩ জন পাহাড়ি নিজ জমি ও বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদের শিকার হবেন। প্রধানত ত্রিপুরা জাতি অধ্যুষিত এই বসতিগুলো শত বছরের পুরোনো এবং তারা জীবিকার জন্য মুলতঃ জুম চাষের উপর নির্ভরশীল।
প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়তি হলে ৬টি হিন্দু মন্দির, ২টি খৃষ্টান গীর্জা ও ১টি বৌদ্ধ বিহার ধ্বংস, পরিত্যক্ত বা ব্যবহার-অনুপযোগী হয়ে পড়বে এবং এলাকার জনগণ তাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। পর্যটনের নামে অবকাঠামো নির্মাণ ও ব্যাপক সংখ্যক লোকের আনাগোনার ফলে এলাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এক কথায়, অর্থনৈতিক ক্ষতি ছাড়াও প্রস্তাবিত আলুটিলা বিশেষ পর্যটন জোন প্রকল্পটির সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত ক্ষতি মারাত্মক ও সুদূরপ্রসারী হবে বলে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়।
স্মারকলিপিতে স্থানীয় জনগণের মতামত না নিয়ে ব্যক্তি বিশেষের উত্থাপিত ‘আলুটিলা বিশেষ পর্যটন জোন, খাগড়াছড়ি নামে অর্থনৈতিক অঞ্চল’ গঠনের প্রস্তাব বাতিল করা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে উক্ত প্রকল্পের পরিবর্তে বরং আলুটিলাসহ তার আশেপাশের জমির মালিকদের ফলজ, বনজ ও ঔষধী গাছের বাগান সৃজনের জন্য আর্থিক সহযোগিতা, প্রণোদনা ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
—————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।