বগাছড়িতে পাহাড়ি গ্রামে হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে খাগড়াছড়িতে তিন সংগঠনের বিক্ষোভ
খাগড়াছড়ি: রাঙামাটির নান্যাচর উপজেলার বগাছড়িতে সেনা মদদে সেটলার কর্তৃক পাহাড়ি গ্রামে অগ্নিসংযোগ ও বৌদ্ধ বিহারে হামলকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর খাগড়াছড়ি জেলা শাখার উদ্যোগে খাগড়াছড়ি শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর বাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নারাঙহিয়া, উপজেলা হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ারে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। এতে পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রতন স্মৃতি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর কেন্দ্রীয় নেতা সচিব চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অংগ্য মারমা ও খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আহ্বায়ক জিকো ত্রিপুরা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি মিশুক চাকমা।
বিক্ষোভে মিছিল ও সমাবেশে বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত লোক অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশ চলাকালে কতিপয় সেটলার সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। তবে অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সমাবেশ শেষ হয়।
সমাবেশে ইউপিডিএফ’র কেন্দ্রীয় নেতা সচিব চাকমা বিজয় দিবসের দিন বগাছড়িতে পাহাড়ি গ্রামে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, সেনাবাহিনীর কায়েমী স্বার্থবাদী অংশটির ইন্ধনেই সেটলার বাঙালিরা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে পাহাড়িদের ৩টি গ্রামে ৫৭টি বসতবাড়ি ও দোকান পুড়িয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, সেটলাররা একটি বৌদ্ধ বিহারে হামলা, ধর্মীয় গুরুকে মারধর ও বুদ্ধমূর্তি লুট করেছে।
তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এই বাংলাদেশে নানা সরকার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু কোন সরকারই পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণের মঙ্গলের জন্য এগিয়ে আসেনি। এই দেশের শাসকশ্রেণী পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি জনগণসহ দেশের সাধারণ জনগণকে বিভিন্নভাবে শোষণ-নির্যাতন চালিয়ে দেশ শাসন করছে। এই শাসকচক্র পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়ি জনগণকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য কখনো ভূমি বেদখল, কখনো পাহাড়ি নারী নির্যাতন-হত্যা, কখনো সাম্প্রদায়িক হামলা কিংবা কখনো কখনো পাহাড়ি দালালদের দিয়ে আন্তঃজাতিগত বিভেদ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করে করে চলেছে।
তিনি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ-নিপীড়ন ও অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশের প্রগতিশীল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন ও উন্নয়নের কথা বলে পাহাড়িদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদের চক্রান্তে মেতে উঠেছে। সেটলারদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক বিষবাস্প ছড়িয়ে দিয়ে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। সরকারের এই কূটকৌশলের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে পাহাড়ি বসতিতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত সেনা-সেটলারদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা, সেটলারদের সেনা মদদদান এবং সাম্প্রদায়িক উস্কাানি ও হামলা বন্ধ করার দাবি জানান।
সমাবেশ শেষে মিছিলটি চেঙ্গী স্কোয়ার থেকে শান্তি নিকেতন-উপালি পাড়া হয়ে স্বনির্ভরে গিয়ে জিকো ত্রিপুরার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার(১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবসের দিন সকালে নান্যাচরের বগাছড়িতে সেটলার বাঙালিরা অতর্কিতে পাহাড়িদের ৩টি গ্রামে হামলা চালিয়ে ৫৭টি বসতবাড়ি ও দোকান পুড়ে ছাই করে দেয়। এছাড়া তারা একটি বৌদ্ধ বিহারেও হামলা চালায়। এতে এক বৌদ্ধ ভিক্ষুকে মারধর, বিহারের জিনিসপত্র তছনছ ও ৫টি পিতলের বুদ্ধমূর্তি লুট করে নিয়ে যায়।
—————-
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।