ঢাকায় বনভান্তের প্রতি হাজারো মানুষের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন

0

নিজস্ব প্রতিবেদক
সিএইচটিনিউজ.কম
রাজধানী ঢাকায় কলাবাগান মাঠে পরম পূজ্য আর্য শ্রাবক মহান সাধক অর্হৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তেকে হাজার হাজার জনতা শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেআজ সকাল ৮টায় স্কয়ার হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ সেখানে নিয়ে আসা হলে ফুলের পাঁপড়ি ছিটিয়ে দিয়ে ও সাধু সাধু ধ্বনি দিয়ে তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়এ সময় কলাবাগান মাঠ লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠেতিল ধারনের জায়গা ছিল না
মহান ভান্তের শবদেহটি স্টেজে শায়িত রেখে ধর্মীয় অনুষ্ঠান শুরু হয়রাজবন বিহারের জ্যেষ্ঠ বৌদ্ধ ভিক্ষু ও বনভান্তের অন্যতম প্রধান শিষ্য শ্রীমৎ জ্ঞানপ্রিয় মহাস্থবির পঞ্চশীল, সংঘ দান ও অষ্ট পুরষ্কার দান অনুষ্ঠান পরিচালনা করেনএরপর উপাসক উপাসিকাবৃন্দ বনভান্তের কফিনে পুষ্প অর্পন করে শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এবং ইউপিডিএফ, আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে বনভান্তের প্রতি পুস্পস্তবক অর্পন করা হয়ইউপিডিএফের পক্ষ থেকে পুষ্পমাল্য অর্পন করেন দলের সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা ও সাধারণ সম্পাদক রবি শংকর চাকমাঅনুষ্ঠানে চাকমা রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়, রাজবন বিহার পরিচালনা কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি গৌতম দেওয়ান, পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপিও উপস্থিত ছিলেন
দুপুর সাড়ে বারটার দিকে শ্রদ্ধেয় বনভান্তের মরদেহটি একটি বিশাল গাড়ির বহর রাঙামাটির উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেরাজবন বিহারে তার মরদেহ রাখা হবে এবং বেশ কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলবে বলে এক ভিক্ষু জানিয়েছেন
গতকাল ৩টা ৫৫ মিনিটে স্কয়ার হাসপাতালে বনভান্তে পরিনির্বাণ (শেষ নিঃশেষ ত্যাগ) লাভ করেনএর আগে ইউপিডিএফ সভাপতি প্রসিত খীসা তাকে সেখানে দেখতে যানতিনি চলে আসার কিছুণের পরই মহান ভান্তের মহাপ্রয়াণ ঘটেমৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছরগত ৮ জানুয়ারী তিনি রাঙামাটিতে তার ৯৩তম জন্মদিন পালন করেন
তার পরিনির্বাণের পর সারা পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় ও বিদেশের ভক্তদের মধ্যে শোক ও বিষাদের ছায়া নেমে আসেতার মৃত্যুর খবর শুনে হাজার হাজার উপাসক উপাসিকা স্কয়ার হাসপাতালে ভিড় জমানঅনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন
মহান বৌদ্ধ সাধক বনভান্তে ১৯২০ সালের ৮ জানুয়ারী রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের মুরোঘোনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেনতাঁর পারিবারিক নাম ছিল রথীন্দ্র চাকমাতার বাবার নাম হারু মোহন চাকমা এবং মাতার নাম বীরপুদি চাকমা
বনভান্তে ১৯৪৯ সালে ২৯ বছর বয়সে চট্টগ্রামের নন্দন কানন বৌদ্ধ বিহারে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেনসেখানে কিছু সময় ধ্যান সাধনার পদ্ধতি শেখার পর তিনি রাঙামাটির ধনপাদার গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করেনসেখানে তিনি মছা-মাছির উপদ্রব সহ্য করে, বাঘ ভালুক, সাপ ইত্যাদি হিংস্র প্রাণীর ভয় উপো করে, রোদ-শীত-ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে একাকী বেশ কয়েক বছর কঠোর তপশ্চ্যাচরণ করেনপরে কাপ্তাই বাঁধের পানিতে উক্ত জনপদ পানিতে তলিয়ে গেলে এক উপাসক তাকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় আমন্ত্রণ করে নিয়ে যানসেখানেও তিনি লোকালয় থেকে দূরে গহীন বনে তার ধ্যান সাধনা অব্যাহত রাখেনএখানে থাকার সময়ই তিনি বনভান্তে নামে পরিচিতি পান
১৯৭১ সালে কিছু উপাসক তাকে লংগুদু আমন্ত্রণ করে নিয়ে যান১৯৭৬ সালে তিনি রাঙামাটিতে রাজবন বিহারে চলে আসেনচাকমা রাজমাতা বিনীতা রায় ও ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ করে সেখানে নিয়ে যান এবং কয়েক শত একর জমি দান করে রাজ বন বিহার প্রতিষ্ঠা করেন
পার্বত্য চট্টগ্রামে বুদ্ধ ধর্মের পুনর্জাগরণে ও প্রচার-প্রসারে মহান সাধক বনভান্তের অবদান অপরিসীমতিনি ১৯৯৪ সাল থেকে গৌতম বুদ্ধ সময়ের পুণ্যাশীলা বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত নিয়মে কঠিন চীবর দানোৎসব চালু করেনসেই পর থেকে প্রতি বছর রাজ বনবিহারে এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে
বনভান্তে কঠোর ধ্যানের মাধ্যমে নির্বাণ সাত করে অর্হত্ত্ব লাভ করেছেন বলে বিশ্বাস করা হয়এছাড়া তিনি ঋদ্ধি শক্তির অধিকারী বলেও মনে করা হয়তার মতো অর্হৎদের আবির্ভাব পৃথিবীতে দুর্লভতিনি আজীবন গৌতম বুদ্ধের অহিংসা, মৈত্রী ও করুণার বাণী প্রচার করে গেছেনপার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদেরকে সদ্ধর্মে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি বিরাট অবদান রেখেছেনএজন্য তিনি অনাগত শত শত হাজার হাজার বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন এবং বুদ্ধনীতি পালনে ও নির্বাণ লাভেচ্ছুদের অফুরন্ত প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More