পাহাড় ধসে শতাধিক প্রাণহানিতে ইউপিডিএফ-এর গভীর শোক প্রকাশ, ৩ দিনের জাতীয় শোক পালনের ঘোষণা

0

Shokইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) আজ বুধবার (১৪ জুন, ২০১৭) সংবাদ মাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে রাঙামাটি ও বান্দরবানসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পাহাড় ধসে শতাধিক লোকের প্রাণহানি ও শত শত আহত হওয়ার ঘটনাকে স্মরণকালের ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় উল্লেখ করে পার্টির পক্ষ থেকে গভীর শোক এবং নিহত-আহত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেছে। এছাড়া উক্ত দুই পার্বত্য জেলার ক্ষতিগ্রস্ত জনবসতি ও তার আশে-পাশের অঞ্চলকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়জনিত বিশেষ জরুরি এলাকা হিসেবে বিবেচনা করে দুর্গত মানুষজনের সাহায্যার্থে নিজ দলীয় ও অঙ্গসংগঠনসমূহের নেতা-কর্মীবাহিনী নিয়ে দুর্যোগ মোকাবেলার লক্ষ্যে সাধ্যমত কার্যক্রম পরিচালনা করার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে বিবৃতিতে।

সংবাদ মাধ্যমে পার্টির পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়েছেন সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা ও সাধারণ সম্পাদক রবি শংকর চাকমা।

সংবাদ মাধ্যমে প্রেরিত বিবৃতিতে ইউপিডিএফ নেতৃদ্বয় আগামী ১৫ জুন থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত তিন পার্বত্য জেলায় তিন দিন ব্যাপী জাতীয় শোক পালনের কর্মসূচি ঘোষণা দেন। জাতীয় শোক পালনের অংশ হিসেবে আগামী ১৫ জুন থেকে ১৭ পর্যন্ত পার্টির সকল কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা, ১৫ জুন এলাকায় এলাকায় গণ কালো ব্যাজ ধারণ, নিহতদের স্মরণে পার্টির সকল সদস্যের নিরামিষ ব্রত পালন, নিহতদের স্মরণে শোকসভা পালনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে। নেতৃদ্বয় পার্বত্য চট্টগ্রাম ও দেশবাসী সকলকে উক্ত শোক কর্মসূচিতে সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশের আন্তরিক আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে ইউপিডিএফ ঘোষিত কর্মসূচির আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সৃষ্ট বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে পার্টি ও তার অংগসংগঠনসমূহ সকল ধরনের সাধারণ কর্মসূচিসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রম আপাতত সময়ের জন্য স্থগিত করার ঘোষণা দান। তিন পার্বত্য জেলার সকল সংগঠন-সমিতি ও ব্যক্তিগণও যেন দুর্গতদের সাথে সংহতি ও সমবেদনা জানিয়ে সমস্ত ধরনের বিনোদনমূলক কর্মসূচি স্থগিত রাখেন, সে উদাত্ত আহ্বানও বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত বিবৃতিতে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে মনুষ্যসৃষ্ট মন্তব্য করে আরো বলা হয়েছে, মুনাফালোভী ও ভূমিদস্যুদের দ্বারা নির্বিচারে পাহাড় কেটে ধ্বংস, বৃক্ষ নিধন, নালা-ঝিরি-ঝরনা এলাকা থেকে ব্যাপকভাবে পাথর উত্তোলনের মর্মান্তিক পরিণতি হচ্ছে এ বিপর্যয়। বিবৃতিতে এও বলা হয় যে, হিল ট্র্যাক্টস ম্যানুয়েল লংঘন ও দেশের প্রচলিত আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে প্রশাসন-আইন শৃঙ্খলা-নিরাপত্তা বাহিনীর যোগসাজশে পাহাড়ের জায়গা-জমি বেদখলপূর্বক অবৈধ বসতি স্থাপনে প্ররোচিত করায় পাহাড়ি এলাকা যুগপৎভাবে ঘনবসতি ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে। রাষ্ট্রীয় নীলক্সায় প্রণীত ধ্বংসাত্মক কর্মসূচির কারণে শত শত বছর ধরে নির্বিঘ্নে বসবাসকারী সাধারণ পাহাড়ি জনগণকে এভাবে বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়ে জীবন-সম্পদ দিয়ে খেসারত দিতে হচ্ছে। এই সময়ে লংগদু হামলায় (২ জুন) ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের দুর্গতির পরিসীমা থাকবে না বলে ইউপিডিএফ নেতৃদ্বয় আশংকা প্রকাশ করেন। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগকে মুনাফালোভী-ভূমিদস্যুদের কৃত অপকর্মের প্রতি প্রকৃতির নির্মম প্রতিশোধ বলেও তারা মন্তব্য করেন। তারা এও বলেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সংখ্যালঘু জাতি বিদ্বেষী উগ্র বাঙালি জাতীয়তার ধ্বজাধারী জিয়া-এরশাদ থেকে বর্তমান সরকারও এর জন্য সমানভাবে দায়ী।

ইউপিডিএফ নেতৃদ্বয় প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ মোকাবেলায় পার্টির কর্মীবাহিনী, গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন ব্যক্তি-সংগঠন ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভূমিকা পালনের জোর আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, বেশ ক’ দিন ধরে একটানা বৃষ্টিপাতের ফলে গত মঙ্গলবার (১৩ জুন, ২০১৭) রাঙামাটি জেলা সদর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা, কাউখালী, কাপ্তাই, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি উপজেলা, বান্দরবান, খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি এবং চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও চন্দনাইশে পাহাড় ধসে শতাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া মাটির নিচে অজ্ঞাত সংখ্যক লোকজন আটকা পড়েছে এবং ঘরবাড়ি ও সহায় সম্পদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
—————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More