সরকার ও সেনাবাহিনীর কাছে

সিন্দুকছড়ি অধিবাসীদের আকুতি: পংখীমুড়োতে জনগণের উপর অন্যায় জুলুম বন্ধ করুন

0

নিজস্ব প্রতিনিধি।। সিন্দুকছড়ি ইউনিয়েনর অধিবাসীবৃন্দ সরকার ও সেনাবাহিনীর কাছে আবেদন জানিয়ে বলেছেন, ‘পংখীমুড়োতে জনগণের উপর অন্যায় জুলুম বন্ধ করুন, কমিউনিটি ক্লিনিকের নামে নিরীহ গ্রামবাসীর জমি বেদখল করে সেনা চৌকি নির্মাণ বন্ধ করুন’।

গত ২৯ জুন ২০২১ তারিখে প্রকাশিত দুই পৃষ্ঠার একটি লিফলেটে তারা এমন আবেদন জানান।

লিফলেটে তারা তাদের দুচিন্তা ও আতঙ্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ইদানিং পরিবারে জন্য দৈনন্দিন অন্ন রোজগারের টিন্তার পাশাপাশি আমাদের আরও একটি দুশ্চিন্তা মাথা চেপে বসেছে। আমরা এখন উচ্ছেদে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। আমাদের বংশপরম্পরার আমল থেকে ভোগদখলকৃত জমি থেকে উেএছদ করে তথায় বাঙালি সেটলার পুনর্বাসন করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে গুঞ্জন শুনতে পাচ্ছি। মহালছড়ি-সিন্দুকছড়ি সড়কের সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার পর এলাকায় লোকজনের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে পর্যটন গড়ে তোলা হবে বলেো শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি ১২ জুন রাতের অন্ধকারে ধুমনীঘাট সেনা ক্যাম্প থেকে আর্মিরা বাজার পাড়া গ্রামের সনে রঞ্জন ত্রিপুরা-পিতা-কৃনি কুমার ত্রিপুরার নবনির্মিত বাড়ি ভেঙে দিয়ে সেখানে কমিউনিটি ক্লিনিক নাম দিয়ে আদতে একটি সেনা চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। এই ঘটনা দেখে অনেকে এই মর্মে মন্তব্য করেছেন যে, সনে রঞ্জন ত্রিপুরার জমি বেদখলের মাধ্যমে এলাকায় পাহাড়ি (জুম্ম) তথা ত্রিপুরা বাসিন্দাদের উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও অনেকের জমি এভাবে বেদখল করা হবে’।

এতে এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার অনুমোদন সত্ত্বেও সনে রঞ্জন ত্রিপুরাকে বাড়ি নির্মাণে বাধা দেয়ার অভিযোগ করা হয়।

উক্ত লিফলেটে বাংলাদেশের সংবিধানের ৪২(১) অনু্চ্ছেদে প্রত্যেক নাগরিকের নিজস্ব সম্পত্তি ভোগ করার অধিকার দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তারা বলেন, এই অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে- “আইনের দ্বারা আরোপিত বাধা নিষেধ-সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর ও অন্যভাবে বিলি ব্যবস্থা করিবার অধিকার থাকিবে এবং আইনের কর্তৃত্ব ব্যতীত কোন সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্ত বা দখল করা যাইবে না”।

সনে রঞ্জন ত্রিপুরাকে বাড়ি নির্মাণে বাধা দান ও তার জমি বেদখলের জন্য প্রধানত ধুমনীঘাট সেনা ক্যাম্পের মেজর আনিসকে দায়ি করে তারা বলেন, ‌‘আমরা মনে করি ধুমনীঘাট ক্যাম্পের কমাণ্ডার মেজর আনিস যা করেছেন, তা সম্পুর্ণ বেআইনী এবং নিরীহ মানুষের উপর জোরজবরদস্তি ও জুলুম ছাড়া অন্য কিছু নয়। কোন বিবেকবান মানুষ তা মেনে নিতে পরে না। আমরা এলাকাবাসী তার এহেন কাজের নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। আমরা সনে রঞ্জন ত্রিপুরার পরিবারের সদস্যদের সাথে সুর মিলিয়ে সরকার এবং সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কৃপাদৃষ্টি আকর্ষণ করে এই অন্যায়ের প্রতিকার দাবি করছি’।

সনে রঞ্জনের জায়গায় কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ সম্পর্কে তারা বলেন, ‘সনে রঞ্জন ত্রিপুরার নির্মিত বড়ি ভেঙে দিয়ে সেখানে তথাকথিত কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হলেও তা কেবলমাত্র সাইনবোর্ড সর্বস্ব। সেখানে ডাক্তারও নেই, কেউ চিকিৎসাও নিতে যায় না। বিভিন্ন জায়গায় যে কৌশলে ভূমিদস্যুরা সরকারি বা নিরীহ মানুষের জমি দখল করে থাকে, এটাও মেজর আনিসের সেরকম একটি কৌশল মাত্র। আমাদের প্রশ্ন হলো, কমিউনিটি ক্লিনিক হলে, সেখানে ডাক্তার নেই কেন? কেন সেখানে দিনরাত ২৪ ঘন্টা কেবল সেনাবাহিনীর সদস্যরা থাকে? কেন ‘ক্লিনিক’ স্থাপনের আগে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার, হেডম্যান, কার্বারী তথা সাধারণ জনগণের সাথে আলাপ করা হয়নি ও তাদের মতামত-সম্মতি নেয়া হয়নি? তাহলে “কমিউনিটি ক্লিনিক” নির্মাণ করা হয়েছে কার স্বার্থে’?

পর্যটন কেন্দ্র চাই না দাবি করে লিফলেটে তারা বলেন, ‘আমরা আমাদের এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র চাই না। যে পর্যটন ব্যবস্থাপনায় আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকবে না, যে পর্যটনের কারণে আমাদের উচ্ছেদ হতে হবে, জমি হারাতে হবে, সে পর্যটন আমাদের জন্য অপকার ছাড়া কোন উপকার বয়ে আনতে পারে না’।

লিফলেটে তারা তিনটি দাবি জানিয়েছেন। দাবিগুলি হচ্ছে-

১। সনে রঞ্জন ত্রিপুরার জমি জোরপূর্বক দখল করে নির্মিত ‘কমিউনিটি ক্লিনিকের’ আড়ালে সেনা চৌকি তুলে নিতে হবে এবং উক্ত জমি তকে ফেরত দিতে হবে।

২। সনে রঞ্জন ত্রিপুরাকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ভবিষ্যতে কারো জমি দখল করা হবে না মর্মে নিশ্চয়তা দিতে হবে।

৩। স্থানীয় জনগণ, জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদের সম্মতি ছাড়া পংখীমুড়োয় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে না বলে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে।­

আমাদের হাতে আসা লিফলেটটি পাঠকদের জন্য নীচে দেওয়া হলো:


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More