আমি ইউএনওর কথা মানি না– যামিনী পাড়া বিজিবি জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল মাহমুদুল

0

Matirangaগোমতি প্রতিনিধি: মাটিরাঙ্গার তবলছড়িতে বিজিবি’র যামিনী পাড়া জোন কমান্ডার মাহমুদুল হক গোমতি-তবলছড়ি সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটি’র সদস্যদের গতকাল(মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় ক্যাম্পে ডেকে কোনো প্রকার বৈসাবি র‌্যালি করা যাবে না বলে হুমকি প্রদান করেছে। কমিটির সদস্যগণ এ সময় মাটিরাঙ্গা উপজেলার ইউএনওর অনুমতি নিয়ে এই র‌্যালির  আয়োজন করা হচ্ছে বললে, বিজিবি বা বর্ডার গার্ড-এর উক্ত কমান্ডার বলেন, ‘আমি ইউএনওর কথা মানি না। আগামীকাল(বুধবার) সকালে প্রতিটি জায়গায় আমাদের ফোর্স থাকবে।’ কেউ র‌্যালি করার চেষ্টা করলে তাদের লাঠিচার্জ করা হবে বলে তিনি হুমকি প্রদান করেন। বৈসাবি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক থুইহ্লা প্রু মারমা, সদস্য সচিব বকুল চাকমা ও সদস্য কালোময় চাকমাকে ক্যাম্পে ডেকে রাত ৮.০০টা থেকে ১১.০০ টা পর্যন্ত বসিয়ে রেখে তিনি তাদের এই কথা বলেন।

এছাড়া তবলছড়ি এলাকার জীপ গাড়ি সমিতির লাইন কন্ট্রোলার মো: ইলিয়াসের সাথে জোন কমান্ডার ফোনে কথা বলেন। জোন কমান্ডার কারা গাড়ি ভাড়া করেছে, কয়টা গাড়ি ঠিক করেছে এবং এবং কারা টাকা দিয়েছে জানতে চান। তিনি (ইলিয়াস) এলাকার মুরুব্বীরা সবকিছু করেছে জানালে এরপর জোন কমান্ডার গাড়ি না চালানোর নির্দেশ দেন। এছাড়া লাইন কন্ট্রোলার ইলিয়াসকে গতরাতে পুলিশ ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পযর্ন্ত স্থানীয় তবলছড়ি পুলিশ ফাঁড়িতে বসিয়ে রেখেছে, এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।

#বৈসাবি শোভাযাত্রার ব্যানার কেড়ে নেয়া হচ্ছে এভাবে প্রকাশ্যে, রাজপথে।
#বৈসাবি শোভাযাত্রার ব্যানার কেড়ে নেয়া হচ্ছে এভাবে প্রকাশ্যে, রাজপথে।

শুধু প্রশাসন নয়, সেটলাররাও বৈসাবি র‌্যালিতে বাধা প্রদান করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বাঙালি মটরসাইলেক ড্রাইভার বলেন, সেটলার নেতা ও বড়নাল ইউপি’র ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার মিজানুর রহমান তাঁর এলাকার মটরসাইকেল চালকদের আজ (১২ এপ্রিল) কোন পাহাড়িকে গাড়িতে না তোলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এবং বড়নাল ইউপি চেয়ারম্যান থৈয়লাপাড়া এলাকাসহ মারমা পাড়ায় গিয়ে বৈসাবি র‌্যালী অংশ না নেয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসে।

এরপর যোগ হয়েছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নামধারী মাস্তানের দল। গতকাল (১১ এপ্রিল) রাত আনুমানিক ১২টার দিকে তবলছড়ি কলেজ মাঠ দখল করে নেয় তাঁরা। সকাল সাড়ে ১১টা (এর রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) পযর্ন্ত তাঁরা তা দখলে রেখেছে। সকাল ১০টায় উক্ত মাঠে জড়ো হয়ে বৈসাবি উদাপন কমিটির র‌্যালী অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সকাল থেকে বিজিবি’র সদস্য তবলছড়ি সড়কে রোগী গাড়ি ব্যাতিত সকাল ৬টা থেকে এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ করে রেখেছে। বিজিবি-আওয়ামীলীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগ ও সেটলার সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাইন্দ্যং বাজার, তানাক্কা পাড়া, বগাপাড়া চৌমুহনি, ডাকবাংলা, গ্রীনহিল কলেজের তিন রাস্তা মোড়, তবলছড়ি বাজার, বড়গ্রাম ঢোকার তিন রাস্তা মোড়, বড়নাল বোর্ড অফিস, থইলাপাড়া, মংজায়পাড়া ও রামশিরা এলকার তৈয়বআলী মার্কেটসহ রাস্থার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে লাটিসোটাসহ মারমূখী হয়ে অবস্থান নেয়ায় স্থানীয় পাহাড়িরা ভয়ে অনেকে নিজ নিজ গ্রাম থেকে বেড় হওয়ার সাহস পাননি। থৈমুক স্পোর্টিং ক্লাবের ব্যানারে আনুমানিক ২শ জন কলেজ মাঠে আসতে চাইলে স্থানীয় তৈয়বআলী মার্কেটে সেটলারা বাধা প্রদান করে।

সকাল ৯টার দিকে বড়পাড়া, নারিকেল বাগান, কমলাবাগান, ময়দাছড়া ও জামিনিপাড়া থেকে সাধারণ জনগণ ব্যানার নিয়ে সমাবেশস্থলের দিকে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। তিন রাস্তার মোড়ে বিজিবি সদস্যরা বাধা দিলেও সে বাধা অতিক্রম করে কলেজ মাঠের দিকে চলে যায়। এরপর কলেজ মাঠে ঢুকতে চাইলে সেখানে অবস্থানরত যুবলীগ-ছাত্রলীগ ও সেটলার সংগঠনের নেতাকর্মী ও মাস্তানরা ইট-পাটকেল ও লাটিসোটা হাতে নিয়ে গেইটে অবস্থান নেয়। অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে সেখান থেকে শান্তিপূর্ণভাবে র‌্যালী সহকারে নিজনিজ এলকায় চলে যায়।

অন্যদিকে সকাল সাড়ে ৯টায় গোমতি, সর্বসিদ্ধি পাড়া, উত্তর দক্ষিণ ও মধ্য রাজা পাড়া, ক্যাম্পটিলা ও প্রসন্ন কুমার পাড়া থেকে ত্রিপুরা ডেভলেপমেন্ট ক্লাব এ প্রায় ৪শতাধিক পাহাড়ি জড়ো হয়। স্থানীয় সেটলাররা লাটিসোটা নিয়ে তাঁদেরকে বাধা দিলে কেউ সেখান থেকে কলেজ মাঠের দিকে যেতে পারেনি। এসময় দু’জন ত্রিপুরা জাতিসত্তাকে মারধর করা হয়। এবং অপরএকজন পাহাড়ি গাড়ি ড্রাইভারকে ধরে বেদম মারধর করার পর পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। এসময় ডাকবাংলা বাজার থেকে চরণ ত্রিপুরা ও সুকৃতি চাকমাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ১২টার দিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধারা পুলিশ ফাঁড়িতে যোগাযোগ করলে তাদের দু’জনকে তাঁদের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়।

__________

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More