ইউপিডিএফ-এর বৈসাবি শুভেচ্ছা

ভাতাসহ তিন দিন সরকারি ছুটির দাবি

0

নিজস্ব প্রতিবেদক: পার্বত্য অঞ্চলের সর্ববৃহৎ সামাজিক উৎসব বৈসাবি উপলক্ষে তিন দিন সরকারি ছুটি ঘোষণাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে কর্মরত সরকারি-আধা সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি ও শিক্ষার্থীদের বিশেষ বন্দোবস্তের মাধ্যমে ছুটি-ভাতা ও পরীক্ষার রুটিন নির্ধারণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর সভাপতি প্রসিত খীসা ও সাধারণ সম্পাদক রবি শংকর চাকমা। ঐ তিহ্যবাহী সর্ববৃহৎ সামাজিক উৎসব বৈসাবি (বৈসুক-সাংগ্রাই-বিঝু-বিষু-বিহু) প্রাক্কালে আজ ১২ এপ্রিল বুধবার সংবাদ মাধ্যমে প্রেরিত এক যৌথ বার্তায় এই আহ্বান জানান। একইসাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বস্তরের অধিবাসী ও প্রবাসী ভাই-বোনদের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিবাদন জানানোর পাশাপাশি দীঘিনালায় বৈসাবি আনুষ্ঠানিকতা বর্জনের কর্মসূচির প্রতিও ব্যক্ত করেছেন দ্ব্যর্থহীন সমর্থন।

ïগণমাধ্যমে প্রদত্ত বৈসাবি শুভেচ্ছা বার্তায় ইউপিডিএফ নেতৃদ্বয় মানিকছড়িতে বৈসাবি র‌্যালিতে সেনা হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতিকে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সাথে তুলনা করে ক্ষমতাসীন সরকারের কঠোর সমালোচনা করে তারা বলেন,‘ ফৌজী শাসক আইয়ুব শাহী কর্তৃক বাংলা নববর্ষ উৎযাপনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও রবীন্দ্র সঙ্গীত নিষিদ্ধকরণের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বৈসাবি উৎসবে বাধা প্রদান করা হচ্ছে।’

বৈসাবি উৎসবকে সর্বজনীন বৃহৎ সামাজিক উৎসব ও ঐক্য-সংহতির উপলক্ষ অভিহিত করে ইউপিডিএফ নেতৃদ্বয় বলেন,‘মাটিরাঙ্গায় বৈসাবি র‌্যালিতে সেনা বাধা তোয়াক্কা না করে অংশগ্রহণকারী লোকজন যেভাবে দৃঢ়তার সাথে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে, সেনা কর্তৃক আটক দুই যুবককে ছিনিয়ে এনেছে–তা হচ্ছে স্ব স্ব সংস্কৃতি ঐতিহ্য ও অস্তিত্ব রক্ষার্থে ছাত্র-যুব-জনতার পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বিষ্ফোরণ, এটি এক অর্থে স্থানীয় সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ।’

বার্তায় ইউপিডিএফ নেতৃদ্বয় স্মরণ করিয়ে দিয়ে আরো বলেন,‘মাটিরাঙ্গার মতই পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের ¯্রােত মিলিত হয়ে একদিন বিরাট প্রবাহ সৃষ্টি করবে। পূর্ব বাংলার জনগণ যেমন পাক শাসকচক্রের অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের ভাষা-সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার্থে লড়েছিলো, একইভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্তাসমূহকেও বর্তমানে নিজেদের জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি, স্বকীয়তা রক্ষা ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব পালনের জন্য অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন সংগঠিত করতে হচ্ছে।’

ইউপিডিএফ নেতৃদ্বয় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন,‘কোন জাতি চিরদিন অসংগঠিত বা দুর্বল থাকে না। ঐতিহাসিক নিয়মে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকারহারা জনগণও উঠে দাঁড়াতে বাধ্য। ঐতিহ্যবাহী বৈসাবি উৎসবের মহামিলন ও ঐক্যের শক্তিতে আরো বলীয়ান হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণও সমাজের সমস্ত দালাল প্রতিক্রিয়াশীল বেঈমানদের ষড়যন্ত্র চক্রান্ত নসাৎ করে দেবে। কুসংস্কারাচ্ছন্ন উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির মোকাবিলা করে পাকিস্তান ভাবধারার সেনা-আমলাদের পরাস্ত করে কায়েম করবে কাক্সিক্ষত অধিকার পূর্ণস্বায়ত্তশাসন।’

‘আনন্দ উৎসবের জন্য প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে পরিবেশ ও নিরাপত্তা’ মন্তব্য করে গণমাধ্যমে প্রদত্ত দীর্ঘ বার্তায় ইউপিডিএফ নেতৃদ্বয় বলেন,‘পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কর্তৃক ১১দফা নির্দেশনা জারির পর আক্ষরিক অর্থে উৎসবের পরিবেশ নেই।’ রাতে-বিরাতে বাড়িঘরে ঘেরাও, পাড়া-মহল্লার ভিতর টহল, রাস্তায় তল্লাশির নামে সাধারণ যাত্রীদের নামিয়ে হয়রানি, নান্যাচরে এইচএসসি পরীক্ষার্থী রমেল-রামগড়ে দিনমজুর রুই হ্লা অং’কে মারধর, ইউপিডিএফ কর্মী সুগতসহ দীঘিনালায় ৪ ব্যক্তিকে আটক, নিরীহ লোকজনকে হয়রানির তীব্র নিন্দা জানিয়ে নেতৃদ্বয় অবিলম্বে তা বন্ধের দাবি করেন।

‘সবাইকে নিয়ে আনন্দ উৎসবে সামিল হওয়াই বৈসাবির চেতনা। কাউকে বাদ দিয়ে বা বঞ্চিত রেখে উৎসব পরিপূর্ণ হয় না’ মন্তব্য করে ইউপিডিএফ নেতৃদ্বয় দীঘিনালা এলাকাবাসীর কর্মসূচির প্রতি সম্মান জানিয়ে উৎসবে কৃত্রিম জৌলুস প্রদর্শন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
____________

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More