লামা ও মাটিরাঙ্গায় পাহাড়ি নারীকে ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় দুই নারী সংগঠনের প্রতিবাদ

0

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বান্দরবানের লামায় ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে এক পাহাড়ি নারীকে ধর্ষণ ও খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় এক পাহাড়ি গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে আপোষহীন লড়াইয়ে আন্দোলনরত দুই নারী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন। 

আজ রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি কণিকা দেওয়ান ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমা সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে অবিলম্বে লামায় ধর্ষণ ঘটনায় জড়িত মো. কায়সার ও মাটিরাঙ্গায় ধর্ষণ চেষ্টাকারী মো. সাদ্দামকে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

নারী নেতৃদ্বয় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, মাটিরাঙ্গায় এলাকাবাসী ন্যায়-বিচার পেতে হাতেনাতে ধৃত পাহাড়ি গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টাকারী মো. সাদ্দামকে চালতাছড়া বিজিবি ক্যম্পে হস্তান্তর করলেও বিজিবি সদস্যরা কোন আইনি বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে অভিযুক্ত মো. সাদ্দামকে ছেড়ে দিয়েছে। এতে করে ভুক্তভোগী পাহাড়ি নারীর নিরাপত্তা আরো বেশি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর বিজিবি ক্যাম্প থেকে অভিযুক্ত সাদ্দামকে ছেড়ে দেয়ার মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত করতে উৎসাহ যোগাচ্ছে। 

বিবৃতিতে তারা ধর্ষণ চেষ্টায় অভিযুক্ত অপরাধী মো. সাদ্দামের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন পদক্ষেপ না নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় চালতাছড়া বিজিবি ক্যাম্প কমাণ্ডারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, নারী ধর্ষণ ও নির্যাতন বাংলাদেশের একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ হলো অভিযুক্ত অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আইনি পদক্ষেপ নিতে অবহেলা এবং সুষ্ঠু বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়া।  যার কারণে দিন দিন এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে বৈ কমছে না।

পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী ধর্ষণের ঘটনা জাতি ধ্বংসের ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে নারী নেতৃদ্বয় বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি নারীরা সব সময় ভয়, আতঙ্ক ও অনিরাপদে জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। শাসকগোষ্ঠী নারী ধর্ষণ ও নির্যাতন, গুম, হত্যা ইত্যাদি ঘটনার মধ্য দিয়ে জাতিগত নিপীড়ন চালাচ্ছে। পাহাড়ি জাতির অস্তিত্বকে ধ্বংস করতে পরিকল্পিতভাবে এসব করা হচ্ছে অভিযোগ করে তারা বলেন, আমরা দেখেছি রাষ্ট্রীয় বাহিনী বরাবরই জাতিগত দিক বিবেচনা করে অপরাধীদের পক্ষালম্বন করে থাকে। যার কারণে নারী নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণসহ এ যাবত পাহাড়ি নারীদের উপর সংঘটিত ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় কোন সুষ্ঠু বিচার হয়নি। এই বিচারহীনতার ফলে আজ পাহাড়ি নারীরা  ঘরে বাইরে অনিরাপদ ও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।

বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় অবিলম্বে বান্দরবানের লামায় ধর্ষক মো. কায়সার ও খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় গৃহবধূকে ধর্ষণ চেষ্টাকারী মো. সাদ্দামকে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ পাহাড় ও সমতলে নারীর ওপর নিপীড়ন, নির্যাতন, ধর্ষণ, গুম, হত্যা ও অপহরণের ঘটনা বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

উল্লেখ, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ দুপুরে বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায় ফাঁসিয়াখালীর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ফুটেরঝিরির বাসিন্দা মো. আবদুল্লাহর ছেলে মো. কায়সার (৩৫) কর্তৃক এক পাহাড়ি নারীকে ধর্ষণ এবং একই দিন রাত সাড়ে ৭টায় খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজে নিয়োজিত মহালছড়ি উপজেলার মো. সাদ্দাম (২৮) নামে এক সেটলার যুবক কর্তৃক নিজ বাড়িতে এক পাহাড়ি গৃহবধূকে ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হন। ধর্ষণের চেষ্টায় অভিযুক্ত মো. সাদ্দামকে গ্রামবাসীরা আটক করে পার্শ্ববর্তী চালতাছড়া বিজিবি ক্যাম্পে হস্তান্তর করলেও বিজিবি সদস্যরা অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি বা শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ছেড়ে দেয়।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More