জামিনে কারামুক্ত হলেন লামা ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির নেতা মথি ত্রিপুরা

0

বান্দরবান প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩

মথি ত্রিপুরা। লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের মিথ্যা মামলায় ২৬ দিন কারাভোগের পর গতকাল (সোমবার) জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

বান্দরবানের লামা উপজেলার লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির অন্যতম নেতা মথি ত্রিপুরা লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় ২৬ দিন কারাভোগের পর গতকাল সোমবার (২৭ মার্চ ২০২৩) জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। গতকাল বান্দরবান জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করলে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন। ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সদস্য যোহন ম্রো তাঁর মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

যোহন ম্রো বলেন, গত ২০ ফেব্রুয়ারি লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ’র লেলিয়ে দেয়া দেলোয়ার, মহসিন ও রাজু নেতৃত্বে ২০/৩০ জন ভাড়াটে শ্রমিক রেংয়েন কার্বারি পাড়ায় এসে অশোক বৌদ্ধ বিহারের জায়গা জোরপূর্বক দখল করে অবৈধ ঘর নির্মাণ করে। পরে পাড়াবাসীদের প্রতিবাদের মুখে ২৭ ফেব্রুয়ারি উক্ত অবৈধ ঘরটি তারা নিজেরা ভেঙ্গে ফেলে এর জন্য ম্রো ও ত্রিপুরা পাড়াবাসীদের দায়ি করে। এটা ছিল লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ’র সম্পূর্ণ সাজানো ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই সাজানো ঘটনাকে পুঁজি করে ১ মার্চ ২০২৩ লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ’র সহকারী ম্যানেজার আব্দুল মালেক বাদী হয়ে ১২ জনের নামে লামা থানায় একটি মামলা দায়ের করলে ওই দিনই সন্ধ্যা ৭টার সময় পুলিশ কেয়াজু বাজার থেকে মথি ত্রিপুরাকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।

সদ্য কারামুক্ত ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির নেতা মথি ত্রিপুরা বলেন, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজে’র ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় আমি ২৬ দিন পর কারাগার থেকে মুক্ত হলাম। ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে আমাদের ৪০০ একর জুম ভূমির ন্যায্য আন্দোলনকে কখনো দমন করা যাবে না। ৪০০ একর জুমভূমি রক্ষা না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলনে সামিল থাকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করছি।

রেংয়েন ম্রো (কার্বারি) বলেন, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ আমাদের ৪০০ একর জুমভূমি দখলে নিতে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। প্রতিনিয়ত আমাদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ’র দেলোয়ার, নুরু এবং মহসিন নেতৃত্বে ১৫০ জনের অধিক বহিরাগত ভাড়াটে শ্রমিক চলতি বছর ১লা জানুয়ারি দিবাগত মধ্যরাতে আমাদের পাড়ায় ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, হামলা ভাংচুর ও সর্বস্ব লুট করেছে। ১৭ জানুয়ারি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান আমাদের পাড়ায় এসে প্রতিকারের আশ্বাস দিয়ে গেছেন, কিন্তু বাস্তবে এখনো কমিশনের কার্যকর কোন পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না।

ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রংধজন ত্রিপুরা বলেন, সংবিধানে আইন সবার জন্য সমান উল্লেখ থাকলেও বাস্তবিক অর্থে ভিন্ন। লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃক ম্রোদের পানির উৎস কলাইয়া ঝিরিতে বিষ প্রয়োগ করে জীব বৈচিত্র্য ও মানুষ হত্যার চেষ্টা এবং চলতি বছরের ১ জানুয়ারি দিবাগত রাতে রেংয়েন ম্রো পাড়ায় ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের মিথ্যা মামলায় মথি ত্রিপুরাকে আটক করে জেলখানায় পাঠিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। এতেই স্পস্ট যে, আইন হচ্ছে শোষকদের জন্য এবং শোষিত-বঞ্চিতদের জন্য নয়।

তিনি অবিলম্বে ম্রো ও ত্রিপুরাদের নামে এ যাবত দায়েরকৃত সকল ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা প্রত্যাহার ও ৪০০ একর জুমভূমি বেদখলের পাঁয়তারা বন্ধের দাবি জানান।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ৯ এপ্রিল থেকে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ সরই ইউনিয়নে ম্রো-ত্রিপুরাদের বংশপরম্পরায় ভোগদখলীয় ৪০০ একর জুমভূমি জোরপূর্বক কেড়ে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। আগুন লাগিয়ে দিয়ে জুমভূমি, বাগান-বাগিচা ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা, অশোক বৌদ্ধ বিহার ভাঙচুর ও বুদ্ধ মূর্তি লুট, পরপর মিথ্যা মামলা দায়ের, বাগান কর্তন-ফসল লুট, ঘর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, হামলা-ভাংচুর, পানির উৎস ঝিরিতে বিষ প্রয়োগসহ স্থানীয় ভূমিজ সন্তান ম্রো ও ত্রিপুরাদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত রয়েছে।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More